আপনি কি জানেন বাগান করা মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে?

বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সবাই গৃহবন্দি জীবনযাপন করছি। অনেকে বাসায় বসে থেকেও বিরক্ত। নিজের শখ গুলো কাজে রুপ দেয়ার জন্য এটি একটি উপযুক্ত সময়। আমাদের অনেকরই অনেক ধরণের শখ আছে যার মধ্যে একটি হচ্ছে বাগান করা। আপনি আপনার অবসর সময় টি বাগান করেও কাজে লাগাতে পারেন।

বাগান করার জন্য় যে শুধু অনেক বড় জায়গার প্রয়োজন এই ধারণাটি ভুল। বাগান হতে পারে ছাদে, বারান্দায়, সিঁড়ির কিনারায় এমনকি জানালার পাশে। আপনার একটুখানি হাতের ছোঁয়ায় ঘরের ছাদ কিংবা বারান্দা হয়ে উঠতে পারে নন্দন কানন।

বাগান করা যেমন মানসিক প্রশান্তি দেয় তেমনি শরীরকেও রাখে সুস্থ।

বাগান করা শুরু করার কিছু ধাপ রয়েছে যেগুলো মেনে চলা অপরিহার্য। চলুন ধাপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-
 

মাটি দেওয়া:

ছাদের বাগানে দুভাবে মাটি স্থাপন করা যায়। কোনো পাত্র বা টবের মধ্যে অথবা ছাদকে পানিরোধী করে সরাসরি মাটি ফেলে।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। প্রথম ক্ষেত্রে ছোট ছোট টব বাছাই না করে বড় ট্রে বা প্লাস্টিকের বাক্স নেওয়া যেতে পারে। অনেকেই সিমেন্টে ঢালাই করা বড় টব বানিয়ে নেন। তবে এ ধরণের টবের ওজন অনেক বেশি হয় ফলে ছাদের ধারণ ক্ষমতার বড় অংশই কংক্রিটের টব দখল করে ফেলে।

টব বা সরাসরি মেঝে যেভাবেই মাটি ফেলা হোক না কেন, মাটির ধরণ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। ছাদের বাগানের মাটি এমন হতে হবে যেন তা হালকাও হয় এবং পানিও ধরে রাখতে পারে। বেলে মাটির সঙ্গে সবুজ সার মিলিয়ে তৈরি করা মাটিই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়।
 

গাছ বাছাই:

সব কিছু সঠিকভাবে করার পর এখন গাছ বাছাইয়ের পালা। যেহেতু বাগানটা ছাদে হবে তাই অন্য সব কিছুর মতো গাছ বাছতে হবে ভেবে চিনতে। ছাদের বাগানে ফুল, ফল বা সবজি যে ধরণের গাছই লাগান না কেনো গাছের আকার যতটা সম্ভব ছোট রাখবেন। যদি ফল গাছ বোনার পরিকল্পনা থাকে তবে গাছের উচ্চতা কম রেখে, বেশি ডালপালার ঝাড় রাখুন।

লম্বা কাণ্ডের কম ডালপালার গাছের অসুবিধা হচ্ছে এই ধরনের গাছ অল্প বাতাসেই নুয়ে যাওয়ার বা কাণ্ড ভেঙে যেতে পারে। ছাদে বোনার জন্য লতানো এবং কম উচ্চতার গাছ নেওয়া সবদিক দিয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।

যেসব গাছের শিকড় বেশি গভীরে প্রবেশ করে সেসব গাছও ছাদের বাগানে লাগাবেন না। শিকড় পাশের দিকে বেশি ছড়ায় এমন গাছই ছাদের বাগানের জন্য উৎকৃষ্ট।
 

ছাদের বাগানে লাগানোর মতো কিছু গাছ

ফল: পেয়ারা, পেঁপে, কলা ইত্যাদি হালকা ওজনের গাছ লাগানো যেতে পারে। বড় গাছ যেমন আম বা লিচু লাগালে গাছের আকার যতটা সম্ভব ছোট হতে হবে। এছাড়াও আঙুরের মতো লতানো বা স্ট্রবেরির মতো একদম মাটিতেই জন্মানো গাছ বেছে নেওয়া যেতে পারে।

সবজি: প্রায় সব ধরনের সবজিই ছাদের বাগানে বোনা যায়। সব ধরনের শাক, লতানো-সবজি যেমন লাউ, কুমড়া, শিম থেকে শুরু করে মূলা, গাজর, টমেটো, ফুলকপি, ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম, মরিচ বেগুন সবই বোনা সম্ভব।

ফুল: ফুলের বড় গাছ এড়িয়ে যে কোনো ধরনেরর ছোট ফুলের গাছ লাগানো যায়। গোলাপ, গাদা, বেলির মতো ছোট গাছের ফুল অথবা অপরাজিতা, মর্নিং গ্লোরি ইত্যাদি লতানো গাছ বেড়া তুলে দিয়ে চাষ করা সম্ভব। লতানো এই ফুল গাছ গুলো দেখতেও যেমন ভালো লাগবে তেমনি আপনার দালানের শোভাও বাড়াবে।
 

বাগান করার উপকারিতাঃ

বাগান করার ফলে আপনি মানসিক প্রশান্তি পাওয়ার পাশাপাশি সময়টাকেও উপভোগ করতে পারবেন। কিন্তু এর চেয়েও আরো অনেক বেশি উপকারি হতে পারে বাগান করা যা জানলে আপনি বিস্মিত হবেন। যদি আপনি হাত নোংরা করতে পছন্দ না করেন তাহলে ও যদি মাত্র ৩০মিনিট সময় বাগানের কাজ যেমন- গাছে পানি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, মাটি খনন করা ও গাছ রোপন করা ইত্যাদি করে অতিবাহিত করেন তাহলে তা আপনাকে অনেক বেশি সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। এবার আমরা সেই স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলোর কথাই জানবো-
 

স্ট্রেস দূর করে
হরটটেকনোলোজি জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় যে, বাগান করার কাজ করলে শুধুমাত্র স্ট্রেসই কমেনা কোলেস্টেরল ও ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। বাগান করলে এন্ডোরফিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায় এবং অক্সিজেন সংবহনের উন্নতি ঘটে। এর ফলে আপনার দেহ ও মন শান্ত হয়।
 

আলঝেইমার্স এর ঝুঁকি কমায়
বাগান করার মত সহজ কাজে লিপ্ত থাকলে মস্তিষ্কের আয়তনের উন্নতি ঘটে। ফলে আলঝেইমার্স এর ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। আলঝেইমার্স ডিজিজ নামক জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, বাগানে সময় অতিবাহিত করলে শুধুমাত্র সংবেদনশীলতাই উদ্দীপিত হয়না বরং এমন একটি পরিবেশের সৃষ্টি হয় যার ফলে সুখ স্মৃতিও উদ্দীপিত হয়।

ঘুমের সমস্যা দূর হয়
আপনার যদি ঘুমের সমস্যা থাকে তাহলে জিমে যাওয়া বা মর্নিং ওয়াকে যাওয়ার চেয়ে সকালে উঠে বাগানের কাজ শুরু করুন। এর ফলে কোন ঝামেলা ছাড়াই আপনার রাতের ঘুম ভালো হবে। এই তথ্যটি প্রকাশ করে স্লিপ ২০১৫। বাগানের কাজে শুধু শরীরের উপরই টান পরেনা মনকেও শিথিল করে।
 

মন ফুরফুরে লাগে
হেলথ সাইকোলজি নামক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাগান করার ফলে সুখি হরমোন এন্ডোরফিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায় যা আপনাকে পুনরুজ্জীবিত হতে ও শান্ত হতে সাহায্য করে।

ওজন কমতে সাহায্য করে
বাগান করা ওজন কমতে সাহায্য করে। দিনের যেকোন সময়ে বাগানে ১৫ মিনিট পানি দিলে ৪৫ ক্যালোরি খরচ হয়!


সহানুভূতি শিক্ষা দেয়
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, যারা গাছের যত্ন নেয় তারা অন্যদের তুলনায় ভালোভাবে মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। তারা অন্যকে সাহায্য করতে পছন্দ করে। শিশুদের বাগান করার কাজে লাগালে তাদের শেখার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

এছাড়াও বাগান করার কাজ করলে সেরোটোনিন ও ডোপামিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, ইতিবাচক হতে শিখায়, এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়।

অনেক পরিশ্রমের পরে নিজের বাগানে যখন ফুল ফল আসে তখন মন খুশিতে ভরে ওঠে। গাছের যত্ন একজন করলেও ফসলের খুশি পৌঁছে যায় সবার কাছে। যান্ত্রিক জীবনে সবুজের আনন্দ ছুঁয়ে যাবে সকলের হৃদয়। ধোঁয়া দূষণের শহরে প্রতিটি বাড়ির ছাদ হবে একটি করে অক্সিজেনের ছোট্ট কারখানা। এভাবেই হয়তো দূষণ থেকে শহরকে রক্ষা করার সামান্য একটি অবদান রাখতে পারি আমরা সবাই।