বয়স্কদের মত ছোট শিশুদেরও অ্যালার্জি হতে পারে। খাবার থেকে, বিভিন্ন জায়গা থেকে বা ধুলাবালির কারণে শিশুদের অ্যালার্জি হতে পারে। ছোট শিশুদের অ্যালার্জি হলে বুঝা কঠিন কারণ তারা তাদের অসস্থিরতার কথা ব্যাখ্যা করতে পারেনা।
শিশুদের অনেক সুনির্দিষ্ট অ্যালার্জি হতে পারে, তবে এগুলো সবই নিচের তিন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত-
১। খাবার বা ঔষধ থেকে অ্যালার্জি
২। পরিবেশগত
৩। ঋতুগত অ্যালার্জি
খাবার বা ঔষধ থেকে যে অ্যালার্জি হয় তার উপসর্গ গুলো খুব দ্রুত প্রকাশ পায়। এই উপসর্গ গুলো খুব সাধারণ হতে পারে আবার প্রাণঘাতীও হতে পারে।
মূলত আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে পরিবেশগত অ্যালার্জি হয়ে থাকে। ছোট শিশু কোন কিছু স্পর্শ করলে বা নিঃশ্বাসের সাথে ধুলাবালি যাওয়ার কারণে এই অ্যালার্জি হয়। এই অ্যালার্জি সারা বছরই হতে পারে।
ঋতুগত অ্যালার্জি বিভিন্ন ঋতুতে হয়ে থাকে। বিভিন্ন ঋতুতে পরিবেশের যে পরিবর্তন আসে তার জন্যই মূলত এই অ্যালার্জি হয়ে থাকে। এই অ্যালার্জিকে “hay fever’ ও বলে।
অ্যালার্জির লক্ষন
স্বাভাবিকভাবে ক্ষতিকর নয় এমন জিনিসগুলোতেও যখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম প্রতিক্রিয়া করে তখন বুঝতে হবে যে শরীরে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়েছে। ব্যাক্তি এবং অ্যালার্জির ধরণ ভেদে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন ভিন্ন হতে পারে।
বয়স্কদের মত শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির এতো ভিন্নতা দেখা যায় না। যেমন- শিশুদের মধ্যে ঋতুগত অ্যালার্জি হয়না বললেই চলে। নিঃশ্বাসের মাধ্যমে যে অ্যালার্জি হয় তা ১-২ বছরের আগে দেখা যায় না।
খাবারের অ্যালার্জি
খাবার বা ঔষধ থেকে যে অ্যালার্জি হয় তার উপসর্গ গুলো খুব দ্রুত প্রকাশ পায়। এমনকি কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে। খাবার বা ঔষধ থেকে যে অ্যালার্জি হয় তার সবচাইতে প্রচলিত কিছু লক্ষন হচ্ছে-
ফুড অ্যালার্জির কারণে দুর্বল লাগা, বমি বা তলপেটে ব্যাথা হতে পারে। এছাড়াও শিশুর জিহ্বা বা ঠোঁট ফুলে যেতে পারে।
খাবার বা ঔষধের কারণে যে অ্যালার্জি হয় তা যখন খুব গুরুতর হয়ে যায় তখন তাকে “anaphylaxis” বলে। শরীরে যখন কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ অতিমাত্রায় উৎপাদন হয় তখন anaphylaxis হয়ে থাকে। এর ফলে শিশুর অবস্থা খুব গুরুতর হয়ে যেতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে anaphylaxis হবার মূল কারণ হচ্ছে তীব্র ফুড অ্যালার্জি। কিন্তু মাঝে মাঝে বিভিন্ন ঔষধ যেমন – অ্যান্টিবায়টিক এবং অ্যাসপিরিনের কারণে anaphylaxis হতে পারে।
পরিবেশগত অ্যালার্জি
যদিও শিশুদের মধ্যে এই অ্যালার্জি খুব একটা প্রচলিত নয় তবুও ধুলাবালি বা অন্যান্য কারণ যেমন-পোষা প্রাণী, পোকার কামড় বা পরিবেশের অন্যান্য জিনিস থেকে এই অ্যালার্জি হতে পারে। এই অ্যালার্জির বিভিন্ন লক্ষন হচ্ছে-
এছাড়াও আপনার শিশুর র্যাশ বা চুলকানি হতে পারে। বিভিন্ন শ্যাম্পু, সাবান, ডিটারজেনট ইত্যাদি থেকে শিশুর অ্যালার্জি হতে পারে।
ঋতুগত অ্যালার্জি
এধরনের অ্যালার্জির প্রধান লক্ষন হচ্ছে-
যদি বছরের কোন নির্দিষ্ট সময়ে আপনার শিশুর উপরোক্ত লক্ষন গুলো দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে যে তার অ্যালার্জি হয়েছে।
কিভাবে বুঝবেন যে আপনার শিশুর ঠাণ্ডা নাকি অ্যালার্জি হয়েছে?
এছাড়াও অনেক সময় শিশুর ঠাণ্ডা লাগলে অনেকে ভাবেন যে শিশুর অ্যালার্জি হয়েছে। যেহেতু নাকের অ্যালার্জিতে বেশীরভাগ সময়ই সর্দি, হাচি, ছলছলে চোখ, নাক বন্ধ থাকা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায় তাই অনেক সময় আমরা ঠান্ডা এবং অ্যালার্জীর পার্থক্য বুঝতে পারিনা। তারপরও কিছু কিছু লক্ষণ দেখে এদের পার্থক্য আপনি ধরতে পারবেন। শিশুর অ্যালার্জি আছে কিনা তা বোঝার জন্য নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোজার চেষ্টা করুন-
১। আপনার শিশুর কি সব সময় ঠান্ডা লেগে থাকে? কেননা ঠান্ডা সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন এর ভেতর কমে যায়। অ্যালার্জির ক্ষেত্রে সেটা হয়না।
২। আপনার শিশুর নাক কি সবসময় বন্ধ থাকে বা নাক থেকে পানি পড়ে?
৩। আপনার শিশু কি সব সময় নাক মুছতে থাকে বা হাত দিয়ে নাক উপরের দিকে ঘষতে থাকে?
৪। নাকের সর্দি বা মিউকাস কি পানির মত নাকি ঘন হলুদ অথবা সবুজ?
৫। আপনার শিশু কি খুব বেশি হাচি দেয়?
৬। চোখ কি ছলছলে, লাল অথবা চুল্কাতে থাকে?
৭। চোখের নিচে কি কালচে, বেগুনি অথবা নীল হয়ে থাকে? এগুলোকে ডাক্তারি ভাষায় অ্যালার্জিক শাইনার (Allergic Shiners) বলে।
৮। শিশু কি মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়?
৯। শিশুর কি সব সময় শুকনো কাশি থাকে?
১০। শরীরে কি লাল র্যাশ হয়?
যদি এই প্রশ্নগুলোর একটির বা তার বেশির উত্তর “হ্যাঁ” হয় তবে বাচ্চার চারপাশের পরিবেশের কোন কিছুতে তার অ্যালার্জি থাকার সম্ভাবনা বেশি। যেসব শিশুদের শ্বাসতন্ত্র জনিত অ্যালার্জি থাকে তাদের কানের ইনফেকশন, এ্যজমা আর সাইনাস ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
অ্যালার্জি কি বংশগত?
বাবা মায়ের অ্যালার্জি থাকলে বাচ্চাও অ্যালার্জিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে অ্যালার্জির ধরন হুবহু বাবা মায়ের মত একই ধরণের নাও হতে পারে। যেমন মা অথবা বাবার যদি পশুপাখিতে অ্যালার্জি থাকে তার মানে এই নয় যে বাচ্চারও পশুপাখিতেই অ্যালার্জি থাকবে।
অ্যালার্জি পরীক্ষা করা
অ্যালার্জির মাত্রা বেশি আছে কি-না তা দেখার জন্য ডাক্তাররা বিভিন্ন পরীক্ষা করে থাকেন, যেমন-
স্কিন প্রিক টেস্ট: রোগীর ত্বকের ওপর বিভিন্ন অ্যালার্জেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং কোন জিনিসে অ্যালার্জি আছে তা ধরা পড়ে।
রক্তের আরএসটি বা রেডিও অ্যালারগোসোরবেন্ট (রাস) টেস্ট : এই পরীক্ষার জন্য রক্ত নিতে হয়। স্কিন প্রিক টেস্ট কোনো কারণে করা না গেলে এই পরীক্ষা করা হয়। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য এটি প্রযোজ্য।
বুকের এক্স-রে: বুকের এক্স-রে করে দেখা দরকার অন্য কোনো কারণে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা।
স্পাইরোমেট্রি বা ফুসফুসের ক্ষমতা দেখা : রোগীর ফুসফুসের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। ৫ বছরের বেশি বয়সের শিশুর জন্য এটি প্রযোজ্য।
অ্যালার্জির সমন্বিত চিকিৎসা হল অ্যালার্জেন পরিহার : অ্যালার্জির সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া গেলে তা পরিহার করে চললে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
অ্যালার্জি প্রতিরোধের প্রধান উপায় হচ্ছে অ্যালার্জেন থেকে শিশুকে দূরে রাখা। যেমন - যদি পোষা প্রাণী থেকে শিশুর অ্যালার্জি হয়ে থাকে তাহলে শিশুকে অবশ্যই পোষা প্রাণী থেকে দূরে রাখতে হবে।
এর পাশাপাশি প্রথম থেকেই কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে, যেমন-
এছাড়াও অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে ঔষধ খাওয়াতে পারেন। ভ্যাকসিন অ্যালার্জি রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। প্রায় ৮০ বছর ধরে ভ্যাকসিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত।
সূত্রঃ ইন্টারনেট