আমাদের দেশে সারা বছরেই বিভিন্ন রকম পিঠার প্রচলন রয়েছে। তবে শীতকাল আসলে যেন তা আরো বেড়ে যায়। শীত মানেই হলো বাঙ্গালীদের জন্যে পিঠাপুলির উৎসব।পিঠা ছাড়া শীতকাল যেন জমেই না। শীতকালে নতুন চালের গুঁড়া আর খেজুরের গুড় দিয়ে নানা রকম পিঠা তৈরী করা হয়। দুধ, খেজুরের রস আরো অন্যান্য জিনিস দিয়ে তৈরী পিঠার স্বাদ অতুলনীয়।গ্রামে পিঠার প্রচলন বেশি চোখে পড়লেও শহুরে সমাজও এথেকে পিছিয়ে নেই। শহরে রাস্তাঘাট, দোকান এমন কি বাসায়ও বিভিন্ন রকম পিঠা তৈরী করা হয়।তাছাড়া শহুরে জীবনের একগেয়েমি কাটাতে অনেকে ছুটে যায় পিঠা উৎসবে। আজকে চলুন দেখে নেয়া যাক শীতকালীন পিঠার রেসিপি :
১. পাকন পিঠা
উপকরণঃ ২ কাপ ময়দা, ২কাপ দুধ, ১ চা চামচ লবণ, ১টি ডিমের কুসুম, ২ টেবিল চামচ বিস্কুটের গুঁড়া, ২ টেবিলচামচ ঘি ।
সিরার জন্য: ২ কাপ চিনি, ৩ কাপ পানি, ৩টি সবুজ এলাচ।
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমে একটি পাত্রে দুধ, ঘি ও লবণ মিশিয়ে গরম করে নিন। এবার এতে ময়দা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ঢেকে ৫ মিনিট অল্প আঁচে রাখুন। এবার খামিরটি নামিয়ে আরেকটি সসপ্যানে নিয়ে একটু ঠান্ডা করে হাতে ঘি মাখিয়ে ভালো করে ১০ মিনিটের মতো ময়ান করে নিন। তারপর এতে ডিম ও বিস্কুটের গুড়ো দিয়ে আরও কিছু সময় ময়ান করে নিন।
এবার খামিরটি গোল বা ডিমের আকৃতি করে পিঠার ছাঁচ বা চামচ দিয়ে আপনার পছন্দ মতো ডিজাইন করে ডুবো তেলে অল্প তাপে বাদামি করে ভাজুন। ভাজা শেষ হলে ঠান্ডা হতে দিন। এবার আরেকটি পাত্রে পানি, চিনি ও এলাচ দিয়ে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন শিরা বানিয়ে নিন। সিরা হাল্কা গরম থাকা অবস্থায় পিঠা সিরায় দিয়ে ৪-৫ ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর পরিবেশন করুন মজাদার পাকন পিঠা।
২. নারকেলের তিল পুলি
উপকরণ: ২ কাপ কুরানো নারকেল পুরের জন্য, আধা কাপ ভাজা তিলের গুঁড়া, ১ কাপ খেজুরের গুড়, ২ টেবিল-চামচ আতপ চালের গুঁড়া, এক চিমটি এলাচ গুঁড়া, ২-৩টা দারুচিনি । এছাড়া খামিরের জন্য লাগবে ২ কাপ আতপ চালের গুঁড়া, দেড় কাপ পানি, স্বাদমতো লবণ, দুই কাপ তেল ভাজার জন্য।
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমে একটি পাত্রে কুরানো নারকেলে গুড় দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রান্না করে নিতে হবে। তারপর একটু আঠালো হয়ে এলে এতে এলাচ, তিল ও চালের গুঁড়া ভালো করে মিশিয়ে রান্না করতে হবে। তারপর নারকেলের তেল উঠে পুর যখন শক্ত হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করতে হবে। এবার চালের গুঁড়া ভালোভাবে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এবার চুলা থেকে নামিয়ে একটু ঠান্ডা হলে পানি ছিটিয়ে ভালো করে ময়ান করে রুটি বানাতে হবে। এবার আগে থেকে তৈরী করা পুর রুটির এক কিনারে রেখে বাঁকানো চাঁদের মতো উল্টে পিঠে আটকে দিতে হবে। এবার পিঠা কাটার দিয়ে কিংবা পুলিপিঠা কাটার চাকতি দিয়ে পিঠা কেটে নিতে হবে। পিঠা কাটার পর সাইডে মুড়িয়ে নিয়ে হবে যাতে বাজার সময় পুর বের না হয়ে যায়। এবার গরম তেলে মচমচে করে ভাজতে হবে। তারপর পরিবেশন করুন মচমচে মজাদার নারকেলের তিল পুলি পিঠা।
৩. খোলাজা পিঠা
উপকরন: ২ কাপ চালের গুঁড়ি, লবন স্বাদমত, ২ টি হাঁসের ডিম, গরম পানি পরিমানমত, মাটির খোলা (পিঠা তৈরির জন্য)
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমে একটি পাত্রে চালের গুঁড়ি, লবন এবং পানি মিশিয়ে মোটামুটি পাতলা গোলা তৈরি করে নিন। এরপর সেই মিশ্রণে ডিম দিয়ে হাল্কাভাবে নেড়ে মিশিয়ে নিন। পিঠার গোলা ঘন মনে হলে প্রয়োজনে অল্প অল্প করে পানি মিশিয়ে পাতলা করে নিন। এবার চুলায় মাটির খোলা গরম হতে দিন। খোলা ভালভাবে গরম হয়ে গেলে গরম খোলায় ডালের চামচের দেড় চামচ গোলা দিয়ে খোলা ঘুরিয়ে পিঠা ছড়িয়ে দিন। তারপর ঢাকনা দিয়ে রেখে ১০-১৫ সেকেন্ড পর ঢাকনা তুলে দিন। পিঠার চারপাশ খোলা থেকে উঠে আসা শুরু হলে পাতলা খুন্তি দিয়ে পিঠা তুলে নিন। তারপর ঝোলাগুঁড় কিংবা হাঁসের মাংসের সাথে পরিবেশন করুন মজাদার নোয়াখালী অঞ্চলের জনপ্রিয় খোলাজা পিঠা।
আশা করি এই রেসিপিগুলো থেকে আপনারা খুব সহজেই বানিয়ে নিতে পারবেন মজাদার এই পিঠার আইটেমগুলো। তাই এখন বাসায় বানিয়ে পরিবারের সাথে অনুভব করুন শীতের পিঠার উৎসবমুখর আমেজ।