করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ কে এখন বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীনের উহান শহরে গত ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে এই নতুন করোনাভাইরাসের (novel coronavirus) প্রকোপ দেখা দেয়। এর মধ্যেই দেশটির সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মরণঘাতি ভাইরাসটি যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। ২৩ মার্চ, ২০২০ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী (এই আর্টিকেল টি লেখার সময় পর্যন্ত) বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের ৩,৫৩,২৬৬ যার মধ্যে মৃতের সংখ্যা ১৫,৪০৮। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ যার মধ্যে ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
করোনা ভাইরাস কী?
করোনা ভাইরাস এমন এক ভাইরাস, যা সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতোই প্রথমে আক্রমণ করে ফুসফুসে। আস্তে আস্তে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। যার থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ।
করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এ ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও নিম্নোক্ত উপায়েও করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে-
১। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে
২। হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে
৩। ড্রাইভার দের মাধ্যমে
৪। বাসার গৃহ কর্মচারীর মাধ্যমে
৫। টাকার মাধ্যমে
৬। খালি হাতে লিফটের বোতাম চাপলে
৭। আক্রান্ত ব্যাক্তির ব্যবহার করা জিনিস অন্যজন ব্যবহার করলে
৮। বাস বা ট্রেনের রেলিং, সিঁড়ির রেলিং, দরজার হাতল, বেসিনের কল এর মাধ্যমে
৯। বারবার মুখ বা চোখে হাত দেয়ার মাধ্যমে
১০। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে
১১। বাতাসের মাধ্যমে
১২। করোনায় আক্রান্ত ব্যাক্তি যিনি বিদেশ থেকে এসেছেন তার মাধ্যমে
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়ঃ
১। টাকা গোনার পর হ্যান্ড রাব বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন এবং অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনি যে হ্যান্ড রাব বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন সেটা তে সর্বনিম্ন ৭০% বা তার বেশি পরিমাণে ইথাইল অ্যালকোহল আছে।
২। হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করুন
৩। হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন
৪। খালি হাতে মুখ বা চোখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন
৫। খালি হাতে লিফটের বোতাম চাপা থেকে বিরত থাকুন
৬। খালি হাতে বাস বা ট্রাকের রেলিং, সিঁড়ির রেলিং, দরজার হাতল ধরা থেকে বিরত থাকুন
৭। ঘরের বাইরে বের হলে অবশ্যই সারজিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করুন
৮। বাহির থেকে এসে ভালো করে হ্যান্ডওয়াশ কিংবা স্যানিটাইজার দিয়ে ৩০ সেকেন্ড হাত ধৌত করুন। কাজ করার পর এবং খাবারের আগেও হাত ধৌত করুন।
৯। ঠাণ্ডা লাগলে, কাশি হলে, ক্রমাগত হাঁচি এলে, কফ, প্রচণ্ড জ্বর, মাথাব্যথা করলে দেরি না করে হাসপাতালে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
১০। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন
১১। ডিম, মাছ-মাংস ভালভাবে রান্না করুন
১২। অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন এবং বাইরে যাওয়া জরুরি হলে মাস্ক ব্যবহার করুন
১৩। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমন করা থেকে বিরত থাকুন এবং প্রয়োজন ছাড়া আপনার প্রবাসি প্রিয়জনদের বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করুন।
১৪। যেহেতু কাপড়ের মাধ্যমেও করোনার জীবাণু ছড়াতে পারে তাই যেকোনো কাপড় একবার পরিধানের পরপরই ধুয়ে ফেলুন।
কখন কখন হাত ধুতে হবেঃ
১। হাঁচি বা কাশি দেয়ার পর
২। রোগীর শুশ্রূষা করার পর
৩। খাবার প্রস্তুত এবং খাবার গ্রহণের আগে এবং পরে
৪। যখনই হাত ময়লা হয়
৫। পশু পাখি কিংবা পশু পাখির মল স্পর্শ করার পর
৬। ঘরের বাইরে থেকে এসে
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সতর্কতা
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অনেক এলাকায় করোনা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে এবং সেই এলাকা গুলো বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তাই আমাদের উচিত এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য রাখা।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে তা প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য এক তথ্যবিবরণীতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রচার নজরে এলে তথ্য অধিদপ্তরের সংবাদ কক্ষের ফোন নম্বর : ০২-৯৫১২২৪৬; ০২-৯৫১৪৯৮৮; ০১৭১৫২৫৫৭৬৫; ০১৭১৬৮০০০০৮ এবং ই-মেইল : piddhaka@gmail.com/piddhaka@yahoo.com অথবা ৯৯৯-এ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়াও বিদেশফেরত ব্যক্তিদের অবশ্যই ১৪ দিন বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছে রোগতত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে যেকোনো পরামর্শ বা উপদেশের জন্য যোগাযোগ করুন নিম্নোক্ত হটলাইন নম্বরগুলোতে: ৩৩৩, ০১৯৪৪৩৩৩২২২, ০১৪০১১৮৪৫৫১; ০১৪০১১৮৪৫৫৪; ০১৪০১১৮৪৫৫৫; ০১৪০১১৮৪৫৫৬; ০১৪০১১৮৪৫৫৯; ০১৪০১১৮৪৫৬০; ০১৪০১১৮৪৫৬৮; ০১৯২৭৭১১৭৮৫; ০১৯৩৭০০০০১১; ০১৯২৭৭১১৭৮৪ এবং ০১৯৩৭১০০১১।
এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন নম্বর ১৬২৬৩ তেও যোগাযোগ করতে পারেন। পাশাপাশি ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও ই-মেইল এর মাধ্যমেও যোগাযোগ করা যাবে।
ফেসবুক আইডি: Iedcr, COVID-19 Control Room, e-mail : iedcrcovid19@gmail.com
যেহেতু কোভিড-১৯ ভাইরাসটি একদম ই নতুন এবং এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন নেই তাই কোন ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ভাইরাসটির বিস্তার সীমাবদ্ধ করতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কারণ আমাদের সচেতনতাই পারে এই মহামারি থেকে আমাদের সুরক্ষিত রাখতে। তাই নিজে সচেতন হন এবং আপনার আশেপাশের মানুষকেও সচেতন করুন।
সূত্র : https://www.worldometers.info/coronavirus/ , ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক যুগান্তর