চুলের খুশকি তে বিরক্ত বোধ করছেন?

আপনি হয়ত আপনার খুশকি নিয়ে নানান চিন্তায় ভুগছেন বা আপনি হয়ত কোন গাড় রঙের কাপড় ভয়ে পরতে পারছেন না কারণ আপানার কাপড়ে সব খুশকি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

নানা কারণে আমাদের চুলে খুশকি হতে পারে এমনকি পরিবেশগত কারণেও আমাদের চুলে খুশকি হতে পারে।

খুশকি কি?

আমাদের স্কিনের বাইরের লেয়ার “Epidermis” অনেক ডেড স্কিন সেল তৈরি করে থাকে যার কারণে আমাদের স্ক্যাল্পে অনেক খুশকি দেখা দেয়। যেকোনো ধরণের স্কিন টাইপে খুশকি হতে পারে। কিন্তু আমাদের সবারই কি একই ধরণের খুশকি হয়?

চলুন খুশকির ধরন গুলো সম্পর্কে জেনে নেই-

খুশকি মূলত ২ প্রকার – ১। ড্রাই ২। অয়লি

১। ড্রাই স্ক্যাল্প খুসকিঃ আপনার স্ক্যাল্প যখন বেশি ড্রাই হবে তখন আপনার স্কিনে পানি এবং তেলের ব্যালেন্স কম থাকে যার ফলে খুশকি গুলো ছোট হয় এবং ঝরে পড়ে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে আপনার স্ক্যাল্পে অনেক বেশি অসস্থি বোধ করতে পারেন।

২। অয়লি স্ক্যাল্প খুসকিঃ যাদের স্ক্যাল্প অনেক বেশি তেলেতেলে তাদের সিবাম নিঃসরণ বেশি হয় যার ফলে খুব দ্রুত ডেড স্কিন সেল দেখা দেয়। তাছাড়াও অয়লি স্ক্যাল্পে বড় হলুদ খুশকি আপনার চুলে আটকে থাকে, তার পাশাপাশি প্রচুর সিবামও স্ক্যাল্পে আটকে থাকার কারণে প্রচুর ডেড স্কিন সেল দেখা দেয় এবং এর ফলে খুশকি হয়ে থাকে।

অয়লি খুশকি ড্রাই খুশকি থেকে বেশি ভয়ঙ্কর। অয়লি স্ক্যাল্পে যদি বাজেভাবে খুশকি হয় তাহলে Seborrheic dermatitis এবং চুল পড়ে যেতে পারে। এটা এক ধরণের স্কিন ডিসঅর্ডার যার ফলে র‍্যাশ হতে পারে। হাল্কা রঙের স্কিনে এটি লাল বর্ণের হয় এবং গাড় রঙের স্কিনে এটি হাল্কা বর্ণের হয়ে থাকে। এছাড়াও এর জন্য dandruff, cradle cap, seborrhea, seborrheic eczema, and seborrheic psoriasis হতে পারে।

Seborrheic dermatitis হচ্ছে অনেকটা psoriasis, eczema, বা allergic reaction এর মতন দেখতে যা সাধারণত স্ক্যাল্প বা শরীরে হয়ে থাকে।

Seborrheic dermatitis তখন হয় যখন সিবাম থেকে অয়েলের নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং এর ফলে মোলড ও জীবাণু হয় এবং স্ক্যাল্পে দেখা দিতে পারে লালচে ভাব বা ময়লা। সব ধরণের স্ক্যাল্পেই খুশকি হয় তাই ওই অনুযায়ী আমাদের ব্যাবস্থা নেয়া উচিত।    

আপনার নিজের বের করা উচিত আপনার স্ক্যাল্প কি টাইপের এবং সেই অনুযায়ী সমাধানও পেয়ে যাবেন।

এখন আমরা অয়লি ও ড্রাই এই দুই ধরণের স্ক্যাল্পের সমাধান সম্পর্কে জানবোঃ

১। স্বাস্থ্যবান শরীরঃ

যদি আপনার স্কিন স্বাস্থ্যবান না থাকে তখন আপনার স্কিন অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে যাবে এবং ইলাস্টিসিটিও কমে যাবে। তাই স্বাস্থ্যবান শরীরের জন্য আপনার ৬ ঘণ্টা বা এর বেশি ঘুমানো উচিত। বেশি মানসিক চাপ নিবেন না কারণ মানসিক চাপের কারণে আপনার রক্ত চলাচলের ব্যালেন্স কমে যায় যার ফলে এটা আপনার মেটাবলিজম ও স্ক্যল্পের ক্ষতি করতে পারে। তাই স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য বেশি করে ঘুমাবেন এবং চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করবেন। এর পাশাপাশি আপনি ইয়গা বা যেকোনো এক্সারসাইজ ও করতে পারেন।

২। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারঃ

ভিটামিন এ ও বি সিবামের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আপনারা বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার যেমন মাছ, ডিম, মিষ্টি আলু এবং কলা খেতে পারেন। কিন্তু যা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর তা হচ্ছে কফি, চিনি ও মিষ্টি তাই এগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। এমন ফেসিয়াল অয়েল ব্যবহার করুন যেটা তে ভিটামিন এ ও বি রয়েছে যেমন Bio Oil। এতে ভিটামিন এ ও বি উভয় ই রয়েছে। আপনার যদি ড্রাই স্ক্যাল্প হয়ে থাকে তাহলে অল্প পরিমাল Bio Oil হাতে নিয়ে স্ক্যাল্পে ভালো করে মেখে নিন। তবে আপনার স্ক্যাল্প অয়লি হয়ে থাকলে Bio Oil ব্যবহার করবেন না।

৩। হাইজেনিক পরিবেশঃ

তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশ ইত্যাদি প্রতি সপ্তাহে পরিবর্তন করবেন। কারণ এতে অনেক লুকানো জীবাণু থাকে যা আমদের স্ক্যাল্পের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।

৪। চুল পরিষ্কার করা:

চুল ধুয়ার সময় কখনো আপনার স্ক্যাল্পে সরাসরি শ্যাম্পু লাগাবেন না। তাতে আপনার স্ক্যাল্পে যেসব প্রোটিন আছে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই-

- শ্যাম্পু প্রথমে হাতে নিয়ে ভাল করে ফেনা করে নিন এবং তারপর স্ক্যাল্পে মাখুন

- আলতোভাবে স্ক্যাল্পে দুই হাত দিয়ে মাসাজ করে নিবেন

- শ্যাম্পু পুরোপুরি মাথায় ভাল মতন ধুয়ে নিবেন

- সবশেষে ভাল করে মাথা শুকিয়ে নিবেন

আর অবশ্যই এমন সব শ্যাম্পু ব্যাবহার করবেন যা আপনার চুলকে ফিট রাখবে।

এখন জেনে নেয়া যাক কি কি ধরনের শ্যাম্পু আপনার ব্যবহার করা উচিত -

১। ডীপ কিঞ্জিং শ্যাম্পু

২। মাইলড এবং হারশ নয় এমন শ্যাম্পু

৩। PH ব্যালেন্স করার জন্য এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করা যে শ্যাম্পু তে এসিড কম থাকে

 

তাহলে আপনার স্ক্যাল্প বেশি অয়লি বা ড্রাই হবেনা।

আর সবচাইতে ভালো হয় যদি আপনি চুল প্রথমে আঁচরে নিন তাহলে আপনার চুল থেকে সহজেই ময়লা, ডেড স্কিন সেল এবং ধুলাবালি দূর হয়ে যাবে এবং সাথে সাথে রক্ত চলাচল তরান্বিত করতে সাহায্য করবে। আর চুল অবশ্যই গোঁড়া থেকে আঁচড়াতে হবে। তবে কোনভাবেই ভেজা চুল আঁচড়ানো যাবেনা। ভেজা চুল আঁচড়ানোর ফলে হেয়ার ফলিকল ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। তাই আপনি চুল নিয়ে যত সাবধান থাকবেন ও উপরের তথ্যগুলো মেনে চললে আপনি পেয়ে যাবেন খুশকিমুক্ত ঝলমলে চুল।