আজকাল বেশিরভাগ গর্ভবতী মায়েদের ডেলিভারি হয় C-Section দিয়ে অথবা সিজারিয়ান ডেলিভারি। C-Section মূলত তাদের জন্য যাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন- ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার ইত্যাদি আছে। কিন্তু C-Section ডেলিভারি তখনই করা উচিত যখন নরমাল ডেলিভারি তে বিভিন্ন সমস্যা হয় যেমন-বাচ্চা আকারে বড় হয়ে গেলে, বাচ্চার হার্ট রেট বেড়ে গেলে বা কমে গেলে ইত্যাদি। কিন্তু যদি নরমাল ডেলিভারি মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে ডাক্তার রা C-Section ডেলিভারি করে থাকেন।
বর্তমানে ৩০% হাসপাতালে C-Section করা হয়। ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি কে নরমাল ডেলিভারি ও বলা হয়ে থাকে। নরমাল ডেলিভারি অনেক পুরনো একটি পদ্ধতি। নরমাল ডেলিভারি অনেক পুরনো একটি পদ্ধতি হলেও এর সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও আছে।
নরমাল ডেলিভারির সুবিধাগুলি হচ্ছেঃ
নরমাল ডেলিভারির সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে এতে খুব অল্প সময়ে সুস্থ অবস্থায় ফিরে যাওয়া যায়। নরমাল ডেলিভারি তে ব্যাথা একটু বেশি হলেও পরবর্তীতে মা ও শিশুর জন্য সবকিছু অনেক সহজ হয়ে যায়। এছাড়া নরমাল ডেলিভারি তে বিভিন্ন সমস্যা যেমন-শিশুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা, অ্যালার্জির সমস্যা ইত্যাদি অনেক কম হয়। তাছাড়া নরমাল ডেলিভারি করলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক ভালো থাকে। নরমাল ডেলিভারির আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, ডেলিভারির ১২ ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ নেয়া সম্ভব। যেহেতু নরমাল ডেলিভারি তে ঝামেলা কম তাই মায়েরা খুব দ্রুত শিশুদেরকে বুকের দুধ পান করাতে পারেন এবং খুব শীঘ্রই কাজকর্ম শুরু করতে পারেন। নরমাল ডেলিভারির পর কারো যদি কোন ইনফেকশন হয় অথবা কেও যদি ভবিষ্যতে কন্সিভ করতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রেও কোন সমস্যা হয় না।
পাশাপাশি, নরমাল ডেলিভারির শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সিজারিয়ান শিশুদের চাইতে অনেক বেশি হয় কারণ নরমাল ডেলিভারির সময় মায়ের শরীর থেকে এক ধরণের হরমোন এবং ব্যাকটেরিয়া রিলিজ হয় যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু এমনটি C-Section ডেলিভারির ক্ষেত্রে হয় না।
নরমাল ডেলিভারির কিছু অসুবিধাঃ
নরমাল ডেলিভারি অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ এবং মানসিক চাপের কারণ হতে পারে, কারণ সম্পূর্ণ পদ্ধতি টি অনেক দীর্ঘ হয় এবং কতক্ষন সময় লাগতে পারে তা অনুমান করা অনেক কঠিন।
নরমাল ডেলিভারির মত C-Seciton ডেলিভারির ও রয়েছে কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা
C-Seciton এর সুবিধাঃ
C-Seciton এর সবচাইতে বড় একটি সুবিধা হচ্ছে ডেলিভারির তারিখ এবং সময় আগে থেকেই জানা যায়। যার ফলে নরমাল ডেলিভারির মত খুব বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হয় না। আর তাই আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা যায়। এছাড়া C-Seciton এ লেবার পেইন অনেক কম হয় এমনকি অনেক ক্ষেত্রে লেবার পেইন হওয়ার আগেই ডেলিভারি করা সম্ভব হয়।
C-Seciton এর অসুবিধাঃ
C-Section যারা করেন বা এ ব্যাপারে যারা জানেন তারা নিশ্চয়ই এটাও জানেন যে C-Section অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। C-Section এর একটি বড় ঝুঁকি হচ্ছে, সার্জারি করার পর সেলাই এর উপরে ঘা অথবা ইনফেকশন হতে পারে এবং C-Section করার সাথে সাথেই আপনি আপনার শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বুকের দুধ আসতে ৭-১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে যা শিশুর জন্য অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়। শিশুরা পর্যাপ্ত বুকের দুধ না পাবার কারণে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় যেমন-ওজন কমে যাওয়া, মাত্রাতিরিক্ত কান্নাকাটি ইত্যাদি। কিছু শিশুদের ক্ষেত্রে C-Section করার পর ফুসফুসে সমস্যা দেখা দেয় কারণ নরমাল ডেলিভারি তে শিশুর যেসব হরমোনগত পরিবর্তন হয় C-Section এ তা হয় না।
তাছাড়া C-Section ডেলিভারি হওয়ার পর ২-৩ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। এমনকি C-Section করার পর মা শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং অনেক রক্তপাতের ঝুঁকি ও থাকে। এছাড়াও C-Section করার পর ভবিষ্যতে গর্ভধারণে অনেক সমস্যা হতে পারে।
নরমাল ডেলিভারি এবং C-Section ডেলিভারি উভয়েরই সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। আপনি কিভাবে ডেলিভারি করাতে চান তা অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিবেন। কারণ একটি সুস্বাস্থ্যবান শিশু ডেলিভার করতে কোন পদ্ধতি টি আপনার জন্য ভালো হবে তা একমাত্র আপনার ডাক্তার ই বলতে পারবেন।