সব বয়সের মেয়েরাই শরীরে অপুষ্টির কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগেন। মেয়েদের প্রতি মাসের শারীরিক পরিবর্তন, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, ডায়েট এ থাকা ,পর্যাপ্ত পরিমানে না খাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে অপুষ্টিতে ভুগে থাকেন। আপনার কিশোর বয়সে এবং ৫০ এর প্রথম দিকে ভাল খাওয়া বিভিন্ন কারণে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং বয়স-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির ঝুঁকি কমাতে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকে কিছু পুষ্টি উপাদান নিয়ে কথা বলা হলো যা নারীদের খাদ্যের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে-
১। ফলিক অ্যাসিড (ফোলেট) এবং ভিটামিন বি- নতুন কোষ তৈরির জন্য আপনার শরীরে ভিটামিন বি বেশ প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায়, ফলিক অ্যাসিড নিউরাল টিউব গঠনে সাহায্য করে এবং শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ড বিকশিত করে। লোহিত রক্তকণিকা গঠনের জন্যও ফলিক অ্যাসিড প্রয়োজনীয়। ভিটামিন বি এবং ফলিক এসিড যুক্ত খাবারগুলি হলো - পালং শাক, বাদাম, মটরশুটি, কমলার রস; রুটি, পাস্তা,সিরিয়াল, মাছ, মটর,আভাকাডো, মিষ্টি আলু গরুর মাংস এবং সূর্যমুখী বীজ।
২। আয়রন- আয়রন আপনার শরীরের জন্য একটি অপরিহার্য পুষ্টি। এটি আপনার টিস্যুতে অক্সিজেন পরিবহন করে এবং নির্দিষ্ট হরমোন তৈরি করে। পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তক্ষরণের কারণে প্রায়শই শরীরে আয়রনের মাত্রা কমে যায়। এটি রক্তাল্পতার কারণ হতে পারে ।তবে আপনার আয়রনের প্রয়োজন থাকলেও এটি অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত আয়রন খেলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন : কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, বমি ।ভিটামিন সি এর সাথে গ্রহণ করলে আয়রন সবচেয়ে ভালো শোষিত হয়।
৩। ভিটামিন ডি- দুধ এবং পনিরের মতো দুগ্ধজাত খাবারে মূলত ভিটামিন ডি বেশি থাকে। বাকিটা, আপনার শরীর তৈরি করে যখন আপনার ত্বক সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসেন। ৭৮% পর্যন্ত মহিলাদের সন্তান জন্মদানের বছরগুলিতে ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভোগেন৷ ভিটামিন ডি হাড় মজবুত করে এবং ক্যালসিয়ামের কাজ করে। এছাড়া কোষ বৃদ্ধি, ইমিউন ফাংশন, শরীরের প্রদাহ হ্রাস এইসব কাজ করে।
৪। ভিটামিন ই- ভিটামিন ই একটি সুস্থ ইমিউন সিস্টেমের জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন ই একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরকেফ্রি রেডিক্যাল নামক ক্ষতিকারক অণুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। গবেষণায় পাওয়া যায় এটির প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব গর্ভবতী হওয়া বা একটি সুস্থ সন্তান প্রসবের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
যেসব খাবারে এটি পাওয়া যায়: বাদাম, বীজ এবং উদ্ভিজ্জ তেল।
৫। ম্যাগনেসিয়াম- ম্যাগনেসিয়াম আপনার শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যার মধ্যে রয়েছে: রক্তে স্বাস্থ্যকর শর্করা এবং রক্তচাপের মাত্রা বজায় রাখা। এই পুষ্টি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে যদি আপনি সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করে থাকেন। গবেষণায় দেখা যায় যে বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলাদের ম্যাগনেসিয়াম কম থাকে। তাই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, তাড়াতাড়ি ডেলিভারি এবং খুব ছোট বাচ্চা জন্মের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যে খাবারে এটি পাওয়া যায়: বাদাম, পালং শাক, সয়া, মটরশুটি, মটর, ওটস, গম, বার্লি এবং দুগ্ধজাত পন্য।
৬। কোলিন- আপনার শরীরের কোষ ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে শরীরে কোলিন প্রয়োজন। এই অপরিহার্য পুষ্টি আপনার মেজাজ, স্মৃতিশক্তি এবং পেশী নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভাবস্থার প্রথম দিকেও বেশ প্রভাব ফেলে। আপনি যদি গর্ভবতী হওয়ার পরিকল্পনা করেন তবে কোলিন সম্পর্কে আপনার কি পরিমান লাগবে তা আপনার জেনে খাবেন।
যেসব খাবারে এটি পাওয়া যায়: মাংস, মুরগি, মাছ, দুগ্ধজাত পণ্য এবং ডিম ।
সবশেষে নিজের শরীরের যত্ন নিন এবং অবশ্যই প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার খান। প্রয়োজনে ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শে খাবারের তালিকা বানিয়ে নিন।