পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম কি এবং কেন হয় ?

পলি সিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম: পি সি ও এস (pcos) হলো পলি সিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, যা কিনা একটি এন্ডোক্রিন সিস্টেম ডিসঅর্ডার। এই অবস্থায় ওভারিতে প্রচুর এন্ডোজেন তৈরি হয় যা ডিম্বাণু তৈরি ও নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে। এই ডিম্বাণুগুলির কয়েকটা তরল পূর্ণ সিস্টে পরিণত হয়ে ওভারিতে জমা হয় ও একে ফুলিয়ে দেয়, একাধিক সিস্টকে একসঙ্গে বলা হয় পলিসিসিস্ট। এই সিস্টগুলো ওভারির অরগ্যানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্ষতা কমিয়ে দেয়। 

কারণ: ১৮ থেকে ৪৪ বছরের মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ এন্ডোক্রিন গ্রন্থির রোগ হল পিসিওএস। এই বয়সের প্রায় ২% থেকে ২০% মহিলা এই অসুখে আক্রান্ত। এই রোগের একটি প্রধান কারণ হল হরমোনের অসামঞ্জস্যতার জন্য মহিলাদের শারীরিক উর্বরতা কমে যাওয়া। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হয়।

পলি সিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম এর লক্ষণ সমূহ:

*  পিরিয়ড অনিয়মিত হতে থাকা কিংবা কারো আবার অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়া 

* অনিয়মিত পিরিয়ডের জন্য সন্তান ধারণে সমস্যা হওয়া 

* অতিরিক্ত ব্রণের সমস্যা 

* হঠাৎ করে ওজন বেড়ে যাওয়া 

* সামান্য কারণেই স্ট্রেস বাড়তে থাকা 

* দেহের বিভিন্ন জায়গায় অনিয়ন্ত্রিত চুলের বৃদ্ধি দেখা যাবে

* থাইরয়েডের সমস্যা হওয়া

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান রোগ নিরাময়ের চিকিৎসা: পিসিওএসের জন্য কোন প্রতিকার নেই, তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং কিছু নিয়ম মানার মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রিত করা সম্ভব।

খাদ্য নিয়ন্ত্রণ: ফাস্টফুড এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। ওজন বৃদ্ধির ফলে পিসিওএস-এর সমস্যা আগের তুলনায় বেড়ে যেতে পারে। তাই লো-কার্বযুক্ত খাবারকেই বেঁচে নিতে হবে যেমন, ফল, সবুজ শাক-সবজি, গোটা শস্য,বাদাম ইত্যাদি। তাছাড়া প্রতিদিন একটা-দুটো কিউব ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পলিফেনল যা হরমোনাল সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে ।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা পিসিওএস এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। পিসিওএস-এ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ওজন বেড়ে যাওয়ার এক স্বাভাবিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, যা সঠিক সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। কী খাচ্ছেন সারা দিনে, তার হিসাব রাখুন। কতটা ক্যালরি ইনপুট হচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে কারণ ব্যায়াম যেমন ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, তেমনই ওভুলেশন পদ্ধতিতেও সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। ওজন কমিয়ে বিএমআই ২৫-এর নীচে নিয়ে আসতে পারলে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যা অনেকাংশেই কেটে যেতে পারে।

ওষুধ: এই সমস্যায় অনেক চিকিৎসক জন্মনিয়ন্ত্রক ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন। এর বিশেষ ফর্মুলা ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে। দুই হরমোনের ক্ষরণই অ্যান্ড্রোজেনের ক্ষরণ কমিয়ে ডিম্বাণু নিঃসরণে সাহায্য করে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। 

এই সময় মেয়েদের উচিত নিজের সঠিক যত্ন নেয়া  এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। আর যেকোনো  জটিলতা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।