পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কি এবং এর ৮টি লক্ষণ

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম: পি সি ও এস হলো পলি সিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, যা কিনা একটি এন্ডোক্রিন সিস্টেম ডিসঅর্ডার। এই অবস্থায় ওভারিতে প্রচুর এন্ডোজেন তৈরি হয় যা ডিম্বাণু তৈরি ও নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে। এই ডিম্বাণুগুলির কয়েকটা তরল পূর্ণ সিস্টে পরিণত হয়ে ওভারিতে জমা হয় ও একে ফুলিয়ে দেয়, একাধিক সিস্টকে একসঙ্গে বলা হয় পলিসিসিস্ট। এই সিস্টগুলো ওভারির অরগ্যানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্ষতা কমিয়ে দেয়। 

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর ৮টি লক্ষণ-

১.অনিয়মিত পিরিয়ড-

 অনিয়মিত ঋতুচক্র পলিসিস্টিক ওভারির বড় একটি লক্ষণ। হরমোনের তারতম্যের ফলে অনিয়মিত পিরিয়ড হয়। তারতম্য বেশি হলে বছরে দুই-তিনবার বা তারও কম পিরিয়ড হয়। বিবাহিতাদের সন্তান ধারণে সমস্যা হয় অনিয়মিত পিরিয়ডের জন্য। এটি আপনার গর্ভবতী হওয়ার ক্ষমতাতেও হস্তক্ষেপ করতে পারে।

২.অত্যধিক রক্তপাত-

যখন আপনার জরায়ুর আস্তরণ সময়ের সাথে তৈরি হয়, আপনি খুব ভারী রক্তপাতের সাথে পিরিয়ড অনুভব করতে পারেন। পিসিওএস-এ আক্রান্ত অনেকেরই পরপর একাধিকবার পিরিয়ড মিস হয়। ফলে তাদের পিরিয়ড যখন হয়, তখন রক্তপাত স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি হয়।

৩. স্থূলতা-

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম গ্লুকোজ অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রায় ৮০% মহিলা যাদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম আছে তাদের ওজন বেশি বা স্থূল।

 ৪. ব্রণ-

যদি আপনার পুরুষ হরমোনের স্বাভাবিক উৎপাদনের চেয়ে বেশি থাকে, তাহলে আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয়ে উঠতে পারে, যার ফলে আপনার মুখ, পিঠ এবং বুকে ব্রেকআউট হতে পারে।

৫.অবাঞ্ছিত চুল বৃদ্ধি-

লোমের আধিক্য: পিসিওএস-এ নারীর শরীরে পুরুষ হরমোনের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার থেকে অনেকটাই বেড়ে যায়। এই হরমোনের জন্যই মুখ, পেট ও বুকের বিভিন্ন অংশে লোমের বৃদ্ধি হতে থাকে।

৬. মাথাব্যথা-

হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে। 

৭.টাক-

আপনার শরীরের পুরুষ হরমোনগুলি আপনাকে পুরুষ-প্যাটার্ন টাক অনুভব করতে পারে, যার ফলে আপনার মাথার ত্বকের কিছু অংশের চুল পাতলা হয়ে পড়ে এবং পড়ে যায়।

৮. ত্বকের বিবর্ণতা-

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর কারণে আপনার ত্বকে আপনার ঘাড়, কুঁচকি বা আপনার স্তনের নিচে কালো দাগ তৈরি হতে পারে।

পিসিওএস যে বয়সে হতে পারে -

যেকোনো বয়সের নারীরই পিসিওএস হতে পারে। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালীন অবস্থায় যখন থেকে মাসিক শুরু হয়, তার কিছুদিন পর থেকে এই সমস্যা হতে পারে।তবে একই পরিবারের নারীদের মধ্যে অনেকের হয় বলে জেনেটিক ফ্যাক্টরকে দায়ী করা হয়। রোগের প্রাথমিক অবস্থাতেই নারীরা ডাক্তারের কাছে আসছেন এবং ইদানীং রোগ নির্ণয়ের অনেক অত্যাধুনিক ব্যবস্থার কারণে রোগ নির্ণয় হচ্ছে বেশি। 

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান রোগ নিরাময়ের চিকিৎসা: পিসিওএসের জন্য কোন প্রতিকার নেই, তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং কিছু নিয়ম মানার মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রিত করা সম্ভব।

খাদ্য নিয়ন্ত্রণ: ফাস্টফুড এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। ওজন বৃদ্ধির ফলে পিসিওএস-এর সমস্যা আগের তুলনায় বেড়ে যেতে পারে। তাই লো-কার্বযুক্ত খাবারকেই বেঁচে নিতে হবে যেমন, ফল, সবুজ শাক-সবজি, গোটা শস্য,বাদাম ইত্যাদি। তাছাড়া প্রতিদিন একটা-দুটো কিউব ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পলিফেনল যা হরমোনাল সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে ।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা পিসিওএস এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। পিসিওএস-এ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ওজন বেড়ে যাওয়ার এক স্বাভাবিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, যা সঠিক সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। কী খাচ্ছেন সারা দিনে, তার হিসাব রাখুন। কতটা ক্যালরি ইনপুট হচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ওষুধ: এই সমস্যায় অনেক চিকিৎসক জন্মনিয়ন্ত্রক ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন। এর বিশেষ ফর্মুলা ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে। দুই হরমোনের ক্ষরণই অ্যান্ড্রোজেনের ক্ষরণ কমিয়ে ডিম্বাণু নিঃসরণে সাহায্য করে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।

ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে কারণ ব্যায়াম যেমন ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, তেমনই ওভুলেশন পদ্ধতিতেও সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। ওজন কমিয়ে বিএমআই ২৫-এর নীচে নিয়ে আসতে পারলে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যা অনেকাংশেই কেটে যেতে পারে।

এই সময় মেয়েদের উচিত নিজের সঠিক যত্ন নেয়া  এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। আর যেকোনো  জটিলতা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।