অনেক সময় যারা প্রথম মা হয়ে থাকেন তারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর শুরুতে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন আবার অনেক মায়েরাই ব্রেস্ট ফিডিং এর ক্ষেত্রে কিছু সমস্যায় ভুগেন যার কারণে হয়তো শিশুকে বুকের দুধ দেয়া বন্ধ করে দেন যা শিশুর জন্যই ক্ষতিকর। শিশু জন্মের পর প্রথম ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা প্রথম ৬ মাস শিশু যাবতীয় পুষ্টি উপাদান মায়ের বুকের দুধ থেকেই পেয়ে থাকে। তাহলে চলুন আজকে জেনে নেয়া যাক ব্রেস্ট ফিডিং এর সময় কি কি ধরনের সমস্যা হতে পারে এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে।
১। ব্রেস্ট পেইন বা ল্যাচিং পেইনঃ প্রথম মা হয়েছেন যারা তাদের শিশুকে ব্রেস্ট ফিডিং করানোর সময় ব্যাথা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ল্যাচিং পেইন টা যদি বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর পর থেকে শুরু হয় এবং এই ব্যাথা এক মিনিটের বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার শিশুর মুখের পজিশন ঠিক নেই। কেননা আপনি যদি শিশুকে সঠিক পজিশনে ধরে না রেখে দুধ খাওয়ান তাহলে সাধারনত ব্রেস্টে পেইন হয়ে থাকে।
এর থেকে পরিত্রাণের উপায়-
শিশুকে সঠিক পজিশনে ধরতে হবে। শিশুর মাথা ও শরীর সোজা থাকবে এবং খাওয়ানোর সময় মুখ সম্পূর্ণ হা করে নিচের ঠোঁট বাইরের দিকে উল্টে থাকবে। শিশুর পজিশন ঠিক আছে কিন্তু তারপরও ব্যাথা হলে বুঝতে হবে আপনার ব্রেস্ট অনেক শক্ত বা শুষ্ক। এক্ষেত্রে একটু ঢিলেঢোলা পোশাক পড়ুন এবং হাইড্রেটিং ক্রিম ব্যবহার করুন।
২। ব্রেস্টফিডিং এর সময় বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়াঃ শিশু জন্মের পর প্রথম কিছু মাস একটু বেশি ঘুমায় আর ঘুমের মধ্যে সাধারণত শিশুরা মায়ের দুধ খায় না। শিশু যখন জেগে থাকে তখন খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। কিছুক্ষণ খাওয়ানোর পর শিশুকে কাঁধের উপর নিয়ে ঢেকুর তুলিয়ে কিছুক্ষণ আদর করে কথা বলে তারপর আবার অন্য ব্রেস্ট খাওয়ান এতে শিশু ঘুমানোর সুযোগ পাবে না।
৩। দুধের আধিক্য বা ব্রেস্ট এনগর্জডঃ মায়ের দুধের পরিমাণ অনেক সময় বেড়ে যায় তখন শিশু ঠিক মত দুধ খেতে না পেরে মুখ সরিয়ে নেয়। তখন আপনি শিশুকে দুধ খাওয়ানোর আগে চেপে সামান্য দুধ বের করে নিতে পারেন এতে দুধের ফ্লো ঠিক থাকে এবং ব্রেস্ট একটু নরম হয়ে যায় যা বাচ্চার জন্য সহজ হয়।
৪। ম্যাস্টাইটিস বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনঃ অনেক সময় বাচ্চা কে দুধ খাওয়ানো শুরু করার প্রথম সপ্তাহে ব্রেস্টে ব্যাথা অনুভব হয়, ভেতরে কিছু আছে এমনটা মনে হয় এবং জ্বর আসে। এটা একটা ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশন যার ফলে ব্রেস্টে পুঁজ জমে। ডক্টরের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই ঠিক হয়ে যায় তবে অনেক সময় কেটেও পুঁজ বের করা লাগতে পারে। এ সময় শিশুকে একেবারেই দুধ দেয়া বন্ধ না করে অন্য পাশের দুধ খাওয়াতে পারবেন।
৫। শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে নাঃ পর্যাপ্ত দুধ না পাবার প্রধান কারণ হচ্ছে শিশু ঠিক মত দুধ পান করতে পারছে না বা মায়ের বুকে দুধ আসলেই কম। অনেক সময় হরমোনাল কারণে এমনটা হয় আবার যাদের আগে ব্রেস্ট সার্জারি হয়ে থাকে তাদের ব্রেস্টে দুধের পরিমাণ কম থাকতে পারে।
এর থেকে পরিত্রাণের উপায়-
উপরের ২ টি কারণের প্রথম কারণ টি যদি হয়ে থাকে তাহলে বাচ্চা কে সঠিক পজিশনে ধরে দুধ খাওয়ালে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ পেতে পারে আর যদি দ্বিতীয় কারণ হয় তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ না থাকলে একজন অভিজ্ঞ ডক্টরের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশু যাবতীয় পুষ্টি উপাদান মায়ের বুকের দুধ থেকেই পায় তাই মায়ের দুধের অন্য কোন বিকল্প নেই। তাই শিশু মায়ের বুকের দুধ সঠিক ভাবে পাচ্ছে তা সুনিশ্চিত করতে হবে।