পবিত্র রমজান মাসে দৈনন্দিন নিয়মগুলো বদলে যায়। আমাদের খাদ্যাভ্যাস, ঘুম এবং কাজের ধারায় আসে খানিক পরিবর্তন। যার কারণে অনেক সময় ত্বকেও এই প্রভাব পড়তে দেখা যায়। রমজানে সারাদিন রোজা রেখে ত্বক কিছুটা প্রাণহীন ও নিস্তেজ হয়ে পরে। পানির অভাবে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। সিয়াম সাধনার পাশাপাশি এ সময় প্রয়োজন ত্বকের বিশেষ যত্নের।
যেহেতু রমজানের সময় আমাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে এবং পানি গ্রহণের মাত্রা কমে যায় তাই আমাদের ত্বক তার ময়েশ্চার এবং ইলাসটিসিটি হারিয়ে ফেলে আর তাই আমাদের ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে উঠে। চলুন জেনে নেই রমজানে ত্বকের যত্নের বিশেষ কিছু টিপসঃ
১। হাইড্রেশন
পানি শূণ্যতার কারণে এসময় ত্বকের আর্দ্রতা কমে গিয়ে প্রাণহীন ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই এই সময় যথাযথভাবে ত্বককে হাইড্রেট রাখতে হবে। এজন্য ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। বিভিন্ন কার্বনেটেড ড্রিংক যেমন-সোডা, জুস ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি ক্যাফেইন থেকেও দূরে থাকতে হবে কারণ ক্যাফেইন শরীরকে ডিহাইড্রেট করে ফেলে। আপনি যদি শুধু পানি খেতে না চান তাহলে ফলের রসের সাথেও মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার শরীর ও থাকবে হাইড্রেটেড এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
২। ওভার ওয়াশ না করা
রমজানে রোজা রাখার কারণে আমাদের ত্বক ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। অনেকেই আছেন ত্বক কে ঠাণ্ডা রাখার জন্য বারবার মুখ ধুয়ে থাকেন। কিন্তু ওভার ওয়াশের ফলে ত্বকের আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। কারণ ওভার ওয়াশের ফলে ত্বকের প্রয়োজনীয় তেল বের হয়ে যায়। ফলে ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ এবং শুষ্ক। শুধু তাই নয় ওভার ওয়াশের ফলে ত্বকে অ্যাকনে এবং পিম্পল দেখা দিতে পারে। আপনার ত্বক যদি ঠাণ্ডা করার প্রয়োজন হয় তবে আপনি fix spray ব্যবহার করুন।
৩। সানব্লক
গ্রীষ্মের রমজানে ত্বককে সূর্যলোক থেকে দূরে রাখতে বিশেষ সুরক্ষার দরকার হয়। তাই ঘরের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে অবশ্যই সানব্লক ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখতে হবে আপনি যে সানস্ক্রিন টি ব্যবহার করছেন তার SPF এর মাত্রা যাতে কমপক্ষে ৩০ হয়।
৪। এন্টিঅক্সিডেন্ট
আপনি যদি রোজা রাখা অবস্থায়ও আপনার ত্বকের উজ্জলতা ধরে রাখতে চান তাহলে অবশ্যই বেশি বেশি এন্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহন করতে হবে। যেসব খাবারে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার আছে যেমন- বেরি, আলমনড, বেদানা ইত্যাদি ইফতার এবং সেহরি তে বেশি করে খেতে হবে। এছাড়াও বেশি বেশি রসালো ফলমূল খেতে হবে কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেল। অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবারের পরিবর্তে বাদাম, গাঢ় সবুজ শাকসবজি এই উপাদানের অভাব পূরণ করতে পারেন। ইফতারের পর এক কাপ গ্রীন টি হতে পারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভাল উৎস।
৫। ফেস মাস্ক
প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১-২ বার ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন। পাশাপাশি ত্বকের উপর নির্ভর করে ত্বক এক্সফলিয়েট করুন। এতে ক্লগড পোরস দূর হবে এবং ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল এবং কোমল। সবচাইতে ভালো হয় যদি আপনি এই সময়ে DIY মাস্ক ব্যবহার করেন, যেমন- cucumber mask, aloe vera mask ইত্যাদি আপনার স্কিন কে অনেক কোমল রাখবে এবং আরামদায়ক অনুভূতি দিবে।
৬। ত্বক ময়েশ্চারাইজ করুন
ত্বককে পানিশূন্যতা থেকে বাঁচাতে ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে ময়েশ্চারাইজারের কোনই বিকল্প নেই। গরম এবং আর্দ্রতার কথা মাথায় রেখে একটি ওয়াটার বেইজড বা জেল ফর্মুলার ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। তবে হ্যাঁ, যদি বাইরে বেশি গরম থাকে তাহলে হাল্কা ময়েশ্চারাইজার প্রযোজ্য।
৭। রমজানে হালকা মেকাপের মাঝে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখুন। ঘর থেকে বের হবার আগে সামান্য কনসিলার, কমপ্যাক্ট পাউডার লাগান। রোজায় ঠোঁটে কোন প্রসাধনী না লাগানোই ভাল। আপনি অবশ্যই এই সময়ে কম মেকআপ দিবেন কারণ বেশি মেকআপ দিলে গরমের কারণে মেকআপ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা মেকআপ অনেকটা শক্ত শক্ত হয়ে উঠে যেতে পারে। তাই এই সময় ভারি মেকআপ না দেয়াই ভালো।
৮। রমজান মাসে সব রকমের টোনার জাতীয় প্রসাধন এড়িয়ে চলা উচিত। এই ধরণের প্রসাধনী বেশি ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায়। যেহেতু গ্রীষ্মের সময় আমাদের ত্বক অনেক ডিহাইড্রেটেড থাকে তাই টোনার ফেসে দিয়ে বেশিক্ষন অপেক্ষা করবেন না। বেশিক্ষন অপেক্ষা করলে ত্বক টোনার কে পুরোপুরি শুষে নিবে এবং এর ফলে পরে সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলেও ততটা কার্যকরী হবেনা। তাই এমন টোনার ব্যবহার করুন যেটি আপনার স্কিন কে অনেক্ষন হাইড্রেটেড রাখবে।
এছাড়াও, নিয়মিত হাল্কা ব্যায়াম করতে পারেন। তাছাড়া সব সময় পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে হবে। তবেই রমজানে ত্বক থাকবে সুস্থ ও সতেজ।