শিশুর যত্নের সঠিক নিয়ম

ডেলিভারির পর মায়েদের জন্য সবচাইতে আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরা। আর বাসায় ফিরে একজন মা সবচাইতে বেশি সময় কাটান তার নবজাতক শিশুর সাথে। নবজাতক শিশুকে লালনপালনের জন্য প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা এবং সঠিক নিয়ম মানা। চলুন শিশুর যত্নের সঠিক নিয়ম গুলো জেনে নেই-

নবজাতক শিশুকে নাড়াচাড়া করাঃ

নবজাতক শিশুরা খুবই নাজুক হয় এবং তাদের পুরো শরীরই খুব সেনসিটিভ থাকে। তাই নবজাতক শিশুকে নাড়াচাড়ার ক্ষেত্রে খুব সাবধান হতে হবে। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে-

  • শিশুকে ধরার আগে বা কোলে নেয়ার আগে ভালো করে হাত পরিষ্কার করা
  • খেয়াল রাখতে হবে যাতে শিশুর মাথায় এবং ঘাড়ে যথাযথ সাপোর্ট থাকে
  • খেলাধুলা বা যেকোনো কারণেই হোক, কখনই আপনার শিশুকে ঝাঁকাবেন না
  • সবসময় খেয়াল রাখবেন যে আপনার শিশুর সাথে কিছু কিছু খেলা যেমন- হাঁটুর উপর নিয়ে ঝাঁকানো বা বাতাসে ছুরে দেয়া ইত্যাদি খেলা যাবেনা। কারণ আপনার শিশু এখন এধরনের খেলার জন্য প্রস্তুত হয়নি এবং এগুলো শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে

শিশুকে কোলে নেয়াঃ

মাঝে মাঝে আপনার শিশুকে স্পর্শ করতে আপনার কাছে অন্যরকম মনে হতে পারে। কিন্তু এতে দ্বিধার কিছু নেই। আপনি নিশ্চিন্তে আপনার শিশুকে কোলে নিতে পারেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুদের প্রতিদিন ২ ঘণ্টার বেশি সময় কোলে রাখা হয় তারা অন্যান্য শিশুদের চাইতে বেশি হাসিখুশি থাকে এবং কম কান্নাকাটি করে।

সম্পর্ক উন্নয়নঃ

শিশুর যত্নের সবচাইতে মৌলিক একটি কারণ হচ্ছে সম্পর্ক এবং ভালোবাসা। শিশুরাও ধীরে ধীরে তাদের পিতামাতার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে। এছাড়াও দেখা যায় শিশুরা যার কাছে সবচাইতে বেশি থাকে তার সাথে শিশুর মানসিক সম্পর্ক ভালোভাবে গড়ে উঠে।

শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক এবং মানসিক উভয়ের জন্যই প্রয়োজন পর্যাপ্ত আদর এবং যত্ন। শিশুর সাথে আপনার সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য আপনি তার সাথে বিভিন্নরকম খেলাধুলাও করতে পারেন, যেমন – শিশুকে দোলনায় রেখে তাকে বিভিন্নভাবে নাড়ানো, শিশুর সাথে হাসাহাসি করা ইত্যাদি।

এছাড়াও শিশুরা বিভিন্ন শব্দ যেমন – কথা বলা, গান ইত্যাদিতে অনেক ভালো সাড়া দেয় তাই সময় পেলেই আপনার শিশুর সাথে কথা বলুন। 

নিয়মিত রোদে দেয়া

আপনার শিশুকে নিয়মিত রোদে দিন। রোদ ভিটামিন ডি এর খুব ভালো একটি উৎস, যা শিশুর শরীরের জন্য খুবই উপকারি। তাই প্রতিদিন সকাল ৮-১০ টা পর্যন্ত আপনার শিশুকে রোদে রাখুন। আর শীতকালে যদি সকালে রোদ না থাকে তাহলে বিকেলে যে রোদ পাওয়া যায় সেখানে দিতে হবে। নবজাতক শিশুদের জন্মের পর শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা অধিক থাকে যা জন্ডিসের অন্যতম কারণ। নিয়মিত রোদে দিলে শিশুর শরীরে বিরিলুবিনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে।  শিশুকে রোদে দেয়ার সময় তার গায়ে খুব ভালো করে খাঁটি সরিষার তেল মেখে নিতে হবে এবং ম্যাসাজ করতে হবে। বেশিরভাগ সময় নবজাতক শিশুর গায়ের চামড়া উঠে আসে। সরিষার তেল দিলে এই চামড়া পুন্রুদ্ধার করতে সাহায্য করে। এছাড়া রোদে দেয়ার সময় আপনার নবজাতক শিশুর Umbilical cord এ সরিষার তেল দিতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ২-৩ বার সরিষার তেল ব্যবহার করুন। এতে Umbilical cord দ্রুত শুকিয়ে যাবে এবং পরে যাবে। Umbilical cord ঝরে পড়ার পর নাভিতে নিয়মিত হালকা ছেঁকা দেয়া। এতে নাভি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং সুন্দরভাবে ভেতরে চলে যাবে। পাশাপাশি মাথার তালুতে নিয়মিত তেল দিন। এতে শিশুর স্ক্যাল্প দ্রুত ডেভেলপ করবে।

ডায়পার ব্যবহারঃ

আপনি আপনার শিশুকে বাসায় আনার আগেই হয়ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন যে আপনি শিশুর জন্য ডায়পার ব্যবহার করবেন নাকি কাপড় ব্যবহার করবেন। তবে আপনি যদি ডায়পার ব্যবহার করতে চান তাহলে নিচের জিনিসগুলো অবশ্যই সাথে রাখবেন-

  • পরিষ্কার ডায়পার
  • ডায়পার অয়েন্টমেন্ট
  • ডায়পার ওয়াইপস

প্রতিবার ডায়পার পরিবর্তনের সময় আপনার শিশুকে চিত করে শুইয়ে নিন এবং ডায়পার পরিবর্তন করুন। আর শিশুকে পরিষ্কার করার জন্য পানি, কটন বল, পরিষ্কার কাপড় বা ডায়পার ওয়াইপ ব্যবহার করুন।

 

সুত্রঃ KidsHealth