হরমোনাল অ্যাকনে

আমরা সবাই জানি যে আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে অনেক পরিবর্তন হয়। মূলত ৩ টি কারণে আমাদের হরমোনাল অ্যাকনে হয়-

১। বয়ঃসন্ধিকাল

২। মাসিক বা গর্ভাবস্থা

৩। মানসিক চাপ

চলুন আমরা এই হরমোনাল অ্যাকনের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেই-

১। বয়ঃসন্ধিকালঃ

যখন একজন কিশোর বা কিশোরী বয়ঃসন্ধিকালে পৌছায় তখন তাদের শরীরের হরমোনে অনেক পরিবর্তন আসে। এবং এই সময় আমাদের শরীরে এ্যান্ড্রোজেন নামে এক ধরণের হরমোন নিঃসরন হয়। যখন শরীরে এ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায় তখন হরমোনাল ইমব্যালেন্স এর কারণে অ্যাকনে দেখা দেয়। এছাড়াও এই সময়ে আমাদের টি-জোন এবং গালে পিম্পল দেখা দেয়।

২। মাসিক বা গর্ভাবস্থাঃ

মাসিকের সময় ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন নামক ২ টি হরমোন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইস্ট্রোজেন মূলত কোলাজেন এর উৎপাদন বাড়ায় এবং সিবাম কে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে প্রোজেস্টেরন সিবাম রিলিজ করে যার ফলে আমাদের অ্যাকনে দেখা দেয়। তাই বলে এটি ভাবা ঠিক হবেনা যে প্রোজেস্টেরন ক্ষতিকর হরমোন। প্রোজেস্টেরন সারভিক্যাল ক্যান্সার, হতাশা এবং মাথা ব্যাথা দূর করতে এবং স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা ধরে রাখতে সাহায্য করে। মাসিক এর সাইকেলের ২ সপ্তাহ পর শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং যখন আস্তে আস্তে প্রোজেস্টেরন কমতে শুরু করে তখন আমদের ত্বক শুকনো হয়ে যায় এবং তখন অ্যাকনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর মাসিক চলাকালিন সময়ে প্রোজেস্টেরন এর মাত্রা কমে যায় এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায় যার ফলে আমাদের ত্বক ও ভালো থাকে।

এক কথায়, প্রোজেস্টেরন যদি বেড়ে যায় তাহলে হরমোনাল ইমব্যালেন্স হয় এবং এর ফলস্বরূপ অ্যাকনে হয়। আর, গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন এর নিঃসরন আরো  বেড়ে যায় আর তাই এই সময়ে অ্যাকনে এর মাত্রাও বেড়ে যায়।

৩। মানসিক চাপঃ

মানসিক চাপের কারণে শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে অধিক পরিমাণে এ্যান্ড্রোজেন উৎপাদন করে যা অ্যাকনের জন্য দায়ী।

 

আমরা কিছু নিয়ম মেনে চললে খুব সহজেই এই সময় গুলোতে অ্যাকনের সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে পারি। চলুন জেনে নেই অ্যাকনে থেকে বেঁচে থাকার উপায় গুলো-

১। বয়ঃসন্ধিকালঃ

যেহেতু বয়ঃসন্ধিকালে আমাদের শরীরে অনেক ধরণের পরিবর্তন আসে তাই এই সময়ে অ্যাকনের সমস্যা থেকে দূরে থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করা এবং পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেয়া।

এর পাশাপাশি যেসব প্রসাধনী অ্যাকনে দূর করে এবং ত্বকের জন্য আরামদায়ক সেসব প্রসাধনী ব্যবহার করা যেতে পারে।

২। মাসিক বা গর্ভাবস্থাঃ

যেহেতু এই সময়ে আমাদের অ্যাকনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে তাই আমাদের উচিত ত্বকে ভাল একটি ক্লিঞ্জার ব্যবহার করা। যে ক্লিঞ্জার আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত সেই ক্লিঞ্জার টি ব্যবহার করুন। যেহেতু মাসিকের সময় শরীরে প্রোজেস্টেরন এর মাত্রা কমে যায় এবং ডেড সেল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই এই সময়ে এমন একটি ক্রীম ব্যবহার করুন যেটা তে হায়ালুরনিক এসিড আছে। এই এসিড ডেড সেলের ট্রিটমেন্টের জন্য বিশেষ কার্যকরী।

৩। মানসিক চাপঃ

মানসিক চাপের কারণে ত্বক হিট আপ হয়ে যায় যার ফলে ত্বক শুকিয়ে যায়। ত্বকের এই শুষ্কতার জন্য ডেড স্কিন সেল দেখা দেয় এবং এর জন্য সিবাম পোরস থেকে বের হতে পারেনা।

এই সমস্যা সমাধানের কয়েকটি উপায় আছে –

১। গ্রীন টি

২। সুদিং টোনার

৩। হায়ালুরনিক এসিড যুক্ত জেল সিরাম

৪। ত্বকের জন্য আরামদায়ক ক্রীম

অ্যাকনের সমস্যা সমাধান করা যদিও জটিল নয় তবুও নিয়মিত পরিচর্যার অভাবে এই সমস্যা অনেক ভয়ানক রুপ নিতে পারে। মূলত শারীরিক পরিবর্তন বা অস্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইলের কারণে অ্যাকনে হয়ে থাকে।

তাই অ্যাকনে মুক্ত ত্বকের জন্য আমাদের উচিত পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেয়া এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা।