হাইপারপিগমেন্টেশন কী, কেন হয় এবং এর প্রতিকার

আমাদের প্রত্যেকেরই দাগছোপহীন সুন্দর ফ্রেশ ত্বক পছন্দ। আর তার জন্য কিন্তু সবাই আজকাল বেশ স্কিন কেয়ার সচেতন। তবে বর্তমানে হাইপারপিগমেন্টেশন ত্বকের ক্ষেত্রে এক অন্যতম বড় সমস্যা। এর ফলে ত্বক অতিরিক্ত কালচে বা অতিরিক্ত সাদা হয়ে যায়। অর্থাৎ হাইপারপিগমেনটেশন এর কারণে আপনার গায়ের রঙ পুরোপুরি বা আংশিক বা কোনও একটি জায়গায় রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়। তবে এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তাই আজকে আমরা হাইপারপিগমেন্টেশন কী, কেন হয় এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে জানবো। 

হাইপারপিগমেন্টেশন কী- আমাদের ত্বক, চুল এবং চোখের রেটিনার স্বাভাবিক রং আসে মেলানিন নামক পিগমেন্ট থেকে, যা তৈরি হয় মেলানোসাইট নামে বিশেষ এক ধরণের কোষ থেকে। এই মেলানিন অতিরিক্ত পরিমাণে তৈরি হলে ত্বকে দেখা দেয় হাইপারপিগমেন্টেশন।  যার ফলে ত্বকে কালচে বিন্দু বা ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়। কারণ এটি ত্বকের রঙের উপর প্রভাব ফেলে যার ফলে ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়।

হাইপারপিগমেন্টেশনের ধরন এবং কারণ - বিভিন্ন ধরনের হাইপারপিগমেন্টেশন আছে। সাধারণ হল মেলাসমা, সূর্যালোকের প্রভাব এবং পোস্ট-ইনফ্ল্যামেটরি হাইপারপিগমেন্টেশন।

১। মেলাসমা- মেলাসমা হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে বলে মনে করা হয় এবং এটি গর্ভাবস্থায় বিকশিত হতে পারে। শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের পরিমাণ বেড়ে হরমোনের অসামঞ্জস্য হলে তার ফলে হাইপারপিগমেন্টেশন হতে পারে। এসময়  সাধারণত পেট এবং মুখে হাইপারপিগমেন্টেশনের লক্ষন দেখা যায়।   

২। সূর্যালোকের প্রভাব- হাইপারপিগমেন্টেশনের আরেকটি কারণ হতে পারে সূর্যালোক। সূর্যের এর ইউভি এ রশ্মি ত্বকের ভিতর পৌঁছে অতিরিক্ত মেলানিন তৈরি করে। যার কারণে দেখা দেয় হাইপারপিগমেন্টেশন।  

৩। প্রদাহ-পরবর্তী হাইপারপিগমেন্টেশন- এটি কোনো ক্ষত হওয়ার পর যেমন কালশিটে পড়া, পুড়ে যাওয়া, ঘষে যাওয়া বা উগ্র রাসায়নিক দিয়ে চিকিৎসার পর ত্বকের প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখা যায়। ব্রণ হওয়ার পরেও লালচে, বাদামী বা কালো দাগ হিসাবে এটি প্রকাশ পেতে পারে।

হাইপারপিগমেন্টেশনের প্রতিকার :

১। সবসময় উচ্চ এসপিএফ যুক্ত একটি ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন যা সূর্যের ইউভি এ ও ইউভি বি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেবে।

২। একটি ভাল স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চলবেন। যাতে স্কিন হেলথি থাকে। 

৩। রোদে বের হওয়ার সময় টুপি বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবেন যাতে রোদ না লাগে।

৪। ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই সমৃদ্ধ ফল ও শাক সবজি খান প্রচুর পরিমাণে।

৫। প্রতি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি সমস্ত মেকআপ এবং ময়লা পরিষ্কার করেছেন। তারপরে নাইট ক্রিম লাগিয়ে ঘুমান। 

হাইপারপিগমেন্টেশনের ঘরোয়া সমাধান-

১। কাঁচা আলু এবং লেবুর মাস্ক- আলুতে ক্যাটাকোলেস নামে একটি এনজাইম থাকে যা পিগমেন্টযুক্ত ত্বকে ভাল কাজ করে এবং এটিকে হালকা করে। অন্যদিকে, বলা হয় লেবু একটি প্রাকৃতিক ব্লিচ যা ত্বকের ক্ষত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।

প্রস্তুত প্রণালী - একটি পাত্রে গ্রেট করা আলু  নিয়ে তাতে ১/৩ কাপ লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে ত্বকের পিগমেন্টেশনের চিহ্নগুলিতে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ধুঁয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি বেশ কার্যকর এবং দ্রুত ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ২ থেকে ৩দিন ব্যবহার করতে পারেন। 

২। হলুদ এবং দুধের মাস্ক- হলুদ ত্বকের জন্য অন্যতম সেরা ঘরোয়া প্রতিকার। এটিতে চমৎকার ব্লিচিং এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, পাশাপাশি দুধ গাঢ় দাগগুলি সরিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল করে।

প্রস্তুত প্রণালী - একটি পাত্রে ৪ থেকে ৫ চামচ হলুদ  এবং ১০ চামচ দুধ মিশিয়ে নিয়ে ত্বকের পিগমেন্টেশনের চিহ্নগুলিতে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ধুঁয়ে ফেলুন। গোসল করার আগে এই মাস্কটি প্রতিদিন ব্যবহার করুন।

৩। অ্যালোভেরা এবং মধুর মাস্ক - অ্যালোভেরায় মিউকিলিগিনাস পলিস্যাকারাইড রয়েছে যা হাইপারপিগমেন্টেশন নিরাময়ে খুব ভাল কাজ করে। এটি মৃত ত্বকের কোষগুলি অপসারণের জন্য দরকারী এবং নতুন ত্বকের কোষগুলির সাথে ত্বককে পরিপূর্ণ করে।

প্রস্তুত প্রণালী - একটি পাত্রে ২-৩ চামচ অ্যালোভেরা জেল এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিয়ে ত্বকের পিগমেন্টেশনের চিহ্নগুলিতে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ভালো ফলাফলের এই মাস্কটি ২-৩ সপ্তাহের জন্য ব্যবহার করুন।