হোয়াইট হেডস কেন হয়?

 

হোয়াইট হেডস কি?

হোয়াইট হেডস হল এক ধরনের ব্রণ। ত্বক থেকে নির্গত তেল বা মৃত কোষ দিয়ে ত্বকের রন্ধ্র ব্লক হয়ে যাওয়াকে হোয়াইট হেডস বলা হয় । ত্বকের ডেড সেল, ব্যাকটেরিয়া এবং ধুলো-ময়লা আমাদের ত্বকের ওপরের হেয়ার ফলিকসে জমে যায় এবং তার ফলে এক ধরনের সোলেন গ্রোথ হয়। আর এখানে যদি অতিরিক্ত তেল এবং ব্যাকটেরিয়া জমা হয় তখনই দেখা যায় হোয়াইট হেডস। এছাড়াও অতিরিক্ত ধুমপান, দুশ্চিন্তা ও অপরিস্কার ত্বক থেকেও হোয়াইট হেডস হয়ে থাকে। হোয়াইট হেডস শুধু মুখে হয় এমন নয়, মুখের পাশাপাশি ঘাড়ে, গলায়, পিঠে এবং হাতেও হতে পারে।

হোয়াইট হেডস কেন হয়?

সঠিকভাবে হোয়াইট হেডসের ট্রিটমেন্ট করার আগে প্রথমেই জানতে হবে হোয়াইটহেডস কেন হয়। যদিও ময়লাযুক্ত লোমকূপ হোয়াইট হেডস তৈরি হওয়ার প্রধান কারণ, তার পাশাপাশি বেশ কিছু কারণেও হোয়াইট হেডসের সমস্যা দেখা দেয়। কারণগুলো নিম্নরূপ-

১। বয়ঃস্বন্ধিকাল

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়ঃস্বন্ধিকালে হোয়াইটহেডস দেখা দেয় কারণ এ সময় শরীরে হরমোনগত পরিবর্তন দেখা দেয় এবং অধিক মাত্রায় সিবাম উৎপাদন হয়। এ সময় আমাদের ব্রেইন GnRH নামক এক ধরণের হরমোন নিঃসরণ করে যার ফলে আমাদের চামড়ার নিচে যে অয়েল গ্ল্যান্ড থাকে সেখান থেকে অধিক পরিমাণে তেল নিঃসরণ হয়। যার ফলে হোয়াইটহেডস দেখা দেয়।

২। বংশগত সমস্যা

বংশগত কারণেও হোয়াইটহেডসের সমস্যা হয়ে থাকে। পিতামাতার যদি অ্যাকনের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তাদের সন্তানদের ও একই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বংশগত কারণে ইনফ্লামেটরি রেসপন্সের উপর প্রভাব পড়ে যার ফলে অ্যাকনের সমস্যা আরও গুরুতর হয়।

৩। দুশ্চিন্তা

আপনি যত বেশি দুশ্চিন্তা করবেন আপনার হোয়াইটহেডস হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি হবে। আমরা যখন দুশ্চিন্তা করি তখন আমাদের শরীরের তেল উৎপাদনকারী কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। এতে অধিক মাত্রায় সিবাম উৎপাদন হয় যা পোরস গুলো ব্লক করে দেয় এবং ব্রেকআউটসের সমস্যা সৃষ্টি করে।

৪। হরমোনগত পরিবর্তন

বেশিরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রেই তাদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে হোয়াইটহেডস সমস্যা বেশি দেখা দেয়। যেহেতু এ সময় estrogen এর মাত্রা কমে যায় এবং progesterone এর মাত্রা বেড়ে যায় তাই শরীরে অধিক মাত্রায় তেল উৎপন্ন হয়। এছাড়া গর্ভাবস্থায় বা জন্ম নিয়ন্ত্রন পিল খেলেও হোয়াইটহেডসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫। দৈনন্দিন জীবনযাপনঃ

আমাদের খাদ্যাভ্যাসের কারণেও হোয়াইটহেডসের সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন বদঅভ্যাস যেমন-ধূমপান, ড্রিঙ্কস, অপরিমিত ঘুম ইত্যাদির জন্যও হোয়াইটহেডস হতে পারে।  

এছাড়াও নিম্নোক্ত কারণেও হোয়াইটহেডস হতে পারে-

  • ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়ে থাকা।
  • অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
  • স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া।
  • মেয়াদ উত্তীর্ণ মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার।
  • অতিরিক্ত মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার।
  • তৈলাক্ত খাবার বেশি খাওয়া।

হোয়াইট হেডস প্রতিরোধে করণীয়

১. ত্বকে হোয়াইট হেডস থাকলে কখনো টিপে পরিস্কার করবেননা। এতে ত্বকে স্থায়ীভাবে দাগ বা ইনফেকশন হতে পারে। ত্বক সবসময় পরিস্কার করে রাখবেন। কখনওই নোংরা হাত দিয়ে ত্বক মুছবেননা। হাতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পাড়ে, যা থেকে হোয়াইট হেডসের সমস্যা বেড়ে যেতে পাড়ে।

২. হোয়াইট হেডস দূর করতে টমেটো খুবই উপকারী। টমেটোর ভেতরের নরম অংশ নিয়ে হোয়াইট হেডস আক্রান্ত জায়গায় ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৩. কাঁচা আলু ব্লেন্ড করে আপনার ত্বকে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এতে আপনার ত্বক অনেক উজ্জল হবে।

৪. তরমুজের রস এবং লেবুব রস ত্বককে ঠান্ডা করার পাশাপাশি ত্বককে নরমও করে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকে এটা লাগান। কারন তৈলাক্ত ত্বকে হোয়াইট হেডস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৫. শুধুমাত্র কিছু পরিমাণ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার হাতে নিয়ে আপনার ত্বকের হোয়াইট হেডস হওয়া জায়গায় লাগিয়ে রাখুন, ধোয়ার প্রয়োজন নাই।

৬. অ্যালোভেরা জেল নিয়ে আপনার ত্বকে স্বাভাবিকভাবে ম্যাসাজ করুন। এতে হোয়াইট হেডস যাওয়ার সাথে সাথে ত্বক মসৃণ আর কোমল থাকবে।

৭. নাকের পাশে বা ত্বকের যে কোনো জায়গায় হোয়াইট হেডস হলে সেটা কখনই চাপ দিয়ে বের করার চেষ্টা করবেন না। আতপ চালের গুঁড়োর সঙ্গে মসুর ডাল বাটা লাগালে এর থেকে মুক্তি পাবেন।

৮.মুখে গরম ভাপ নেয়া যেতে পারে। একটা গামলায় ধোঁয়া ওঠা গরম পানি নিয়ে তার ওপর মুখ রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে গামলা থেকে মুখের দূরত্ব কমপক্ষে যেন এক হাত থাকে। গরম ভাপ হোয়াইটহেডসের মুখ খুলতে সাহায্য করে আর খুব সহজে হোয়াইটহেডস পরিষ্কার করা যায়।

 

হোয়াইটহেডস দূর করতে বিভিন্ন ধরনের ফেস প্যাক

ফেস প্যাক ১:

মধুতে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যার কারনে ব্যাকটেরিয়াল জীবানু মারার সঙ্গে হোয়াইট হেডসের আকার এবং ইনফ্লেমেশন কমাতেও সাহায্য করে। তাই দুই চামচ মধুর সাথে একটা ডিমের সাদা অংশ এবং এক টেবিল চামচ দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে হোয়াইট হেডস জনিত জায়গায় ভালোকরে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ফেস প্যাক ২:

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বক স্ক্রাব করতে পারেন।এজন্য চিনি, লেবুর রস এবং অলিভ অয়েল দিয়ে মাস্ক তৈরি করে নিন। এরপর এই মিশ্রন দিয়ে ত্বক ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।

ফেস প্যাক ৩:

বেকিং সোডা আর পানি নিয়ে পেস্ট বানান। এবার এই পেস্ট আপনার ত্বকের হোয়াইট হেডস হওয়া অংশে লাগিয়ে যতক্ষণ না শুকিয়ে যায় এভাবে রাখুন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

হোয়াইটহেডস খুব সাধারণ সমস্যা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে হোয়াইটহেডস হতে পারে। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। ত্বকের পরিপূর্ণ এবং যথাযথ যত্ন, ধুলাবালি এড়িয়ে চলা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে আপনি আপনার ত্বককে হোয়াইটহেডস থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।