গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ে যত কথা

গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের হরমোনের পরিবর্তন দেখা দেয়। এসময় হরমোনের বিভিন্ন মাত্রার পরিবর্তনের কারণে অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস দেখা যেতে পারে। যদি আগে কখনও ডায়াবেটিস না হয়ে গর্ভাবস্থায় প্রথম ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাহলে সেটিকে (Gestational Diabetes Mellitus বা GDM) বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়ে থাকে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভধারণের সাধারণত ৫-৬ মাসের মধ্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা দেয়। সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মা ও শিশু দু’জনের জন্যই এটি ঝুঁকিপূর্ণ। আপনার বংশে যদি অন্য কারো ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে, বা যার ওজন বেশি, অথবা যাদের বয়স ২৮ বছরের বেশি এমন মায়েদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। সন্তান জন্মের পর বেশিরভাগ সময় এই সুগার আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঠিক মত নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। সাধারণত গর্ভাবস্থায় তিন ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যেতে পারে।

১। এধরনের রোগীদের ডায়াবেটিস আগে থেকেই থাকে এবং তাকে ইনসুলিন নিতে হয়। এ ধরনের রোগীর শরীরের পেনক্রিয়েজ সাধারণত ইনসুলিন উৎপাদন করে না। 

২। এসব রোগী সাধারণত মোটা হয়। এদের হয়তো পেনক্রিয়েজের মাধ্যমে ইনসুলিন তৈরি হয়। এদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে কিন্তু রক্তে ইনসুলিনের চাহিদা মেটায় না। 

৩। এধরনের রোগীদের সাধারণত আগে থেকে ডায়াবেটিস থাকে না। কিন্তু গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়। যদি সে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, জীবন-যাপন পরিবর্তন না আনে তাহলে ভবিষ্যতে তাঁর ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের লক্ষনঃ 

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে তেমন নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নেই তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ, ঝাপসা দৃষ্টি, অতিরিক্ত পানির তৃষ্ণা, খাবারের পরিমাণ বাড়ানো সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যেতে পারে। 

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে মা ও সন্তানের কি ধরনের জটিলতা হতে পারেঃ

মায়ের ক্ষেত্রে সাধারণত উচ্চ রক্ত চাপ দেখা যেতে পারে, গর্ভ থলিতে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই লেবারে চলে যেতে হতে পারে, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হতে পারে আবার বাচ্চা নষ্টও হয়ে যেতে পারে। ডেলিভারির সময়ে ডেলিভারি দেরি হতে পারে, ডেলিভারির সময় মাথা বের হলেও কাঁধ আটকে যেতে পারে এ ধরনের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডেলিভারির পরে দুধ আসতে দেরি হতে পারে, রক্তপাত হতে পারে আবার ইনফেকশনও হতে পারে। বাচ্চার ক্ষেত্রে, মাথা বড় হতে পারে, কিছু কিছু জন্মগত ত্রুটি দেখা যেতে পারে। তাই বলা যায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মা ও শিশু দু’জনেরই জন্যই অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা

যদি প্রথম দুই ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাহলে সেই ক্ষেত্রে গর্ভধারণ এর পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ডায়াবেটিস আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং পরে গর্ভধারণ করতে হবে। যদি ডায়াবেটিসের মাত্রা ৬-এর নিচে হয় তবে সেক্ষেত্রে বাচ্চা গ্রহণ করতে পারবেন, কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে তবে শিশু অস্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে মা ও শিশু উভয়ের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই এসব সমস্যা রোধে প্রথম থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শুধু ডায়েট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। পাশাপাশি হয়তো খাবার কিছু ঔষুধ দেয়া হয়ে থাকে।তবে অনেকের ক্ষেত্রে ইনসুলিন নেয়াই লাগে। খাবার খাওয়ার আগে ডায়াবেটিসের মাত্রা যদি ৫.৫ মিলি. এবং খাবার পরে ৬.৫ মিলি. এর বেশি হয় তাহলে অবশ্যই ইনসুলিনের মাধমে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। 


মাকে সবসময় চেকআপের ভেতর থাকতে হবে। আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে গর্ভের শিশুটির শারীরিক বৃদ্ধি দেখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত ৩৮ সপ্তাহের আগেই ডেলিভারি করা হয়ে থাকে। তবে আগে ডেলিভারি করালে শিশুটির কিছু সমস্যা হতে পারে। এটাকে মেনে নিতে হবে এবং শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।