কর্মজীবী মায়েরা সন্তান কে দুধ খাওয়ানো নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় থাকেন। তাই অনেকেই হয়ত বাচ্চা কে বাজারের কৌটার দুধ খাওয়াতে শুরু করেন কিন্তু সেই দুধে মায়ের দুধের ঘাটতি কখনওই পুরণ হয় না। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে সঠিক উপায়ে বুকের দুধ সংরক্ষন করবেন।
শুধু কর্মজীবী মায়েরাই বুকের দুধ সংরক্ষন করে বাচ্চা কে খাওয়াতে পারেন ব্যাপার টা তা নয়, অনেক সময় বাচ্চা ঠিক মত বুকের দুধ চুষতে পারে না, অনেক সময় পাবলিক প্লেসে আপনি আপনার বাচ্চা কে বুকের দুধ খাওয়াতেও পারছেন না, আবার অনেক সময় বাচ্চা হসপিটালে থাকা অবস্থায়ও বুকের দুধ খাওয়ানো সমস্যা হয়ে যায় তাই এই সময় গুলো তে যদি বুকের দুধ সংরক্ষন করে রাখা যায় তাহলে খুব সহজেই তা বাচ্চা কে খাওয়ানো যাবে।
প্রথম ধাপঃ দুধ সংগ্রহ
এই পুরো প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ টি হল দুধ সংগ্রহ করা। আর এই কাজ টি আপনাকে করতে হবে খুব সাবধানে। কারণ এই কাজটির উপর নির্ভর করবে অন্যান্য কাজ গুলো। পুরো দুধ সংগ্রহ প্রক্রিয়া কে কয়েকটি ধাপে ভাগ করে নিলে কাজ টি আপনার জন্য খুবই সহজ হয়ে যাবে।
প্রথমে আপনার দুই হাতই খুব ভালো ভাবে সাবান অথবা হ্যান্ড ওয়াশার দিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর হাত দুটো একটু শুকান।
এবার ব্রেস্ট পাম্প টি ভালো ভাবে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর ব্রেস্ট পাম্পটি একটু বাতাসে শুকিয়ে নিন।
পাম্পের সাথে একটি ইন্সট্রাকশন বুক রয়েছে সেখানে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে সেই ভাবে পরিষ্কার করবেন।
এবার ব্রেস্ট পাম্প টি ভালো ভাবে সংযুক্ত করে পাম্প করতে শুরু করুন। তবে পাম্প করার আগে লক্ষ্য রাখবেন ব্রেস্ট ফুল হয়ে আছে কিনা মানে স্তনে পর্যাপ্ত দুধ আছে কিনা।
দ্বিতীয় ধাপঃ কি ধরনের পাত্রে দুধ সংরক্ষণ করবেন
মায়ের দুধ সংরক্ষণের ব্যাপারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই জানেন না যে প্লাস্টিকের বোতলে দুধ সংরক্ষণ করা ঠিক নয়। বাচ্চার দুধ সংরক্ষণ করতে হলে কাঁচের বোতল ব্যাবহার করুন।
দুধ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-
১. বোতলটি অবশ্যই যেন ঢাকনাযুক্ত হয়।
২. কাঁচের বোতলটি গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নেবেন।
৩. যদি একান্তই প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করতে হয়, তবে অবশ্যই অ্যান্টি-কলিক বোতল ব্যবহার করুন।
৪. বোতলে দুধ রাখার পর খেয়াল রাখবেন যাতে ঢাকনাটি ভাল করে বন্ধ থাকে।
তৃতীয় ধাপঃ কোথায়, কিভাবে সংরক্ষণ করবেন
দুধ সংগ্রহ করা হয়েছে, জারে রাখা হয়েছে এখন চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে সংরক্ষণ করবেন যাতে দুধের কোন সমস্যা না হয় আর বাচ্চা কে সেটা সঠিক ভাবে পান করানো যায়।
দুধ সংগ্রহ করার পর ফ্রিজ ব্যবহার না করেই ৪ থেকে ৮ ঘণ্টা রাখা যাবে এবং বাচ্চা কে যে কোন সময় খাওয়ানো যাবে, তবে অবশ্যই দুধ যেন ঠিক মত ঢেকে রাখা হয় সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ফ্রিজেও আপনি ব্রেস্ট মিল্ক সংরক্ষণ করতে পারেন তবে খেয়াল রাখবেন ফ্রিজের তাপমাত্রা যেন ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থাকে মানে ফ্রিজের নীচের অংশে রাখবেন। আর ফ্রিজে সংরক্ষিত দুধ বাচ্চাকে ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত পান করাতে পারবেন।
বুকের দুধ সংরক্ষণের বিষয়ে কিছু পরামর্শ যেগুলো জেনে রাখা প্রয়োজন-
১। মাত্র পাম্প করে বের করা বুকের দুধ সাধারণ জায়গায় ৪ ঘন্টা পর্যন্ত, নরমাল ফ্রিজে ৪ দিন, এবং ফ্রিজের বরফ অংশে ১২মাস পর্যন্তও রাখা যায় তবে বিশেষজ্ঞদের মতে ৬ মাসের মধ্যেই তা ব্যাবহার করে ফেলা ভাল।
২। বরফ থেকে তরল করা বুকের দুধ সাধারণ জায়গায় ২ ঘন্টা পর্যন্ত, নরমাল ফ্রিজে ১দিন, এবং একবার তরল করা বুকের দুধ কখনোই আবার বরফ করবেন না।
৩। খাবার পর অবশিষ্ট বুকের দুধ ২ ঘন্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়, এই সময় পার হলে দুধ ফেলে দিন।
৪। বুকের দুধ শুকনো জায়গায় সূর্যের রশ্মি থেকে দূরে সংরক্ষণ করুন , কখনোই ৭৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে না এতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে।
৫। পাম্প করা বুকের দুধ ফ্রিজের শেষ মাথায় একদম দেয়াল ঘেঁষে রাখুন কেননা এই জায়গাটি ফ্রিজের সবচেয়ে ঠাণ্ডা স্থান এবং খুব সহজে এখানকার তাপমাত্রা পরিবর্তন হয় না।
৬। সংরক্ষিত দুধ ফ্রিজ থেকে বের করে কিছুক্ষণ রুম তাপমাত্রায় রেখে শিশু কে পান করাবেন কিন্তু কখনো গরম করবেন না।
৭। কোন অবস্থাতেই মাইক্রোওয়েভ এ দুধ গরম করা যাবে না এতে দুধের গুনগত মান নষ্ট হয়ে যাবে।
৮। বরফ করা দুধ তরল করতে সারারাত নরমাল ফ্রিজে রেখে দিন এবং খাওয়ানোর কিছু সময় আগে বের করে রুম তাপমাত্রায় রেখে শিশুকে পান করান।
৯। বরফ করা দুধ যদি খুব দ্রুত তরল করার প্রয়োজন হয় তাহলে একটি কুসুম গরম পাত্রের মধ্যে দুধের বোতলটি রেখে দিন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে পানির পরিমাণ যাতে কখনোই বোতলের ঢাকনার উপরে না উঠে।
১০। আপনি ১২০ মিলিলিটার দুধ এক বারে সংরক্ষন করে রাখতে পারবেন।
পৃথিবীতে মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই, একটি শিশুর জন্মের পর শালদুধ খাওয়ানো খুবই জরুরি। বুকের দুধ আপনার শিশুর মেধা বিকাশে যেমন সহায়তা করে তেমনি সব ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। আর মায়েদের ক্ষেত্রে মেদ ঝড়ে যাওয়া, বাচ্চার সঙ্গে অধিকতর আন্তরিকতা, বাচ্চা ও মায়ের মানসিক প্রশান্তি এসব কারণেও মায়েদের উচিৎ যতবেশি সম্ভব বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা।