রমজানে কেমন হওয়া উচিত খাদ্য তালিকা

রমজানে রোযা রাখার ফলে আমাদের সবারই খাবার তালিকায় পরিবর্তন আসে। ইফতার এবং সেহরিতে সবাই একটু ভিন্ন ধরনের খাবার তালিকা রাখে। ইফতারে অনেকেই ভাজাপোড়া খেতে পছন্দ করেন। আবার সারাদিন পর মশলাদার খাবারও পছন্দ করেন অনেকে। কিন্তু সারা দিন রোযা রাখার শেষে আমাদের শরীর অনেক সময়ই সব ধরনের খাবার নিতে পারে না। তার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাবার তালিকার। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক রমজানে আপনার খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত।

ইফতার :মশলাদার খাবারের প্রতি অনেকেরই আছে দুর্বলতা। প্রচুর মশলা ব্যবহারের কারণে খাবার দেখতে এবং ঘ্রাণে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু অতিরিক্ত মশলাদার খাবার খেলে বুক জ্বালাপোড়া করে। শরীরের পাশাপাশি অতিরিক্ত তেল, মশলা ভাজাপোড়া খাবার ত্বকেরও ক্ষতি করে। যাদের ব্রণের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এধরণের খাবার খুবই ক্ষতিকর। তাই ভাজাপোড়া ও মশলাদার খাবার পরিহার করে বেশি বেশি তাজা ফল খেতে হবে। শরবত বা ডাবের পানি আনবে আপনার শরীরে এক্সট্রা প্রশান্তি। যারা ইফতারিতে পেঁয়াজু,বেগুনি, ডাল বড়া, সবজি বড়া, আলুর চপ , বুট খেতে চান তারা হালকা তেলে ভাঁজে খেতে পারেন কিন্তু খেয়াল রাখবেন তেল টা যাতে বাসি না হয়। প্রত্যেক দিনের তালিকায় এসব ভাজাপোড়া না রেখে খেজুর, চিড়া, চালের জাউ , কচি শসা, সু্প , ওটমিল, ফরমালিন মুক্ত অথবা ক্যালসিয়াম কার্বাইডমুক্ত মৌসুমি ফল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

 রুচি অনুযায়ী বাসার রান্না করা নুডলসও খেতে পারেন। বেশি ভাজি ভুনা তেহারি, বিরিয়ানি, হালিম না খাওয়াই ভালো। কারণ এতে বদহজম হতে পারে। রুচি পরিবর্তনের জন্য দু-একটা জিলাপি খেতে পারেন। চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিলে ভালো হয়। এটা খুব তাড়াতাড়ি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ওজন বাড়ায়। তাই যথাসম্ভব চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার কম খান।

রোজায় মধ্যেরাতের খাবার: ইফতারের পর রাতের খাবারটাও কিছুটা হালকা ও সহজে হজম হয় এমন হওয়া উচিত। ঢেঁকিছাঁটা-লাল চালের ভাতের সঙ্গে সবজি বেশি থাকা চাই। যেমন—লাউ, লাউশাক, মিষ্টি কুমড়া, শসা, পটোল, ঝিঙে, কচুশাক, কচু ইত্যাদির ঝোলে তরকারি, এক টুকরা মাছ অথবা এক টুকরা মাংস হতে পারে। আর মনে রাখবেন, একজন মানুষের সারাদিন যে পরিমাণ পানি ক্ষরিত হয় সে পরিমাণ রাতে পান করা উচিত। এই গরমে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি না খেলে হজমের সমস্যা হবে। ইফতারের পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একটু পরপর পানি খেতে হবে।

সেহরি:সেহরি খুব বেশি পরিমাণে খাবার না খেয়ে আমাদের রুচি অনুসারে স্বাভাবিক খাবার খাবেন। সারাদিন খেতে পারবেন না বলে ইচ্ছামত উদরপূর্তি করে খাবেন না। পেটের এক-চতুর্থাংশ খালি রাখবেন। সেহরিতে শাক কম খেয়ে মুরগির মাংস, ডাল খাওয়া ভাল। সেহরির সময় না খেলে আমাদের দেহের বিপাকক্রিয়ায় বেশ পরিবর্তন আসতে পারে। এতে গ্লুকোজ ক্ষয় বেশি হয় বলে ক্লান্তি আসে। অল্প হলেও কিছু খাওয়া দরকার। ঝাল কম থেকে পারে ডিম, মুরগির মাংস খাওয়া যেতে পারে। সেহরিতে মাংস ও ডিম খাওয়া সুবিধাজনক। এই সময়টাতে ঘন ডাল খাওয়া যেতে পারে।

এছাড়া ছোট-বড় সবার জন্যই এক কাপ দুধ খাওয়া উচিত। কারণ, খাবারে চাহিদা মতো প্রোটিন বা আমিষ না থাকলে উপবাসের সময় শক্তির ঘাটতি দেখা দেবে।

 রমজান মাসের খাওয়া এবং ঘুমের বদলে যাওয়া অভ্যাস নিয়মিত রুটিনে ব্যাহত ঘটাতে পারে তবে আপনি যদি আগে থেকেই পরিকল্পনা করেন এবং আপনার নিয়মিত রুটিনটি সামঞ্জস্য করা শুরু করেন, তবে আপনি স্বাস্থ্যসম্মত রমজান উপভোগ করতে পারেন।