শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যেসব খাবার

শিশুর জন্মের প্রথম ৫ বছর খুব ই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময় শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে উন্নত হতে থাকে। তাই এই সময়ে শিশুর খাবার দাবারের প্রতি বিশেষভাবে যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। এই সময় শিশুরা সঠিক পরিমানে পুষ্টি পাচ্ছে কিনা এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মাঝে মাঝে শিশুদের একদম ই খাওয়ানো যায় না আর তাই যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করাটাও কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু সহজ কিছু উপায় মেনে চললে আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারি। যেমন-শিশুরা যে খাবার গুলো খেতে চায় না সেই খাবার গুলো জুস করে বা অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।

আজকে আমরা কথা বলব কিভাবে খুব সহজেই শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়। ছোট শিশুদের জন্য বুকের দুধ অত্যাবশ্যক একটি খাবার কারণ এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। এছাড়াও শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তার খাবারে আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, জিঙ্ক ইত্যাদি থাকাও খুব জরুরি।

১। আয়রনঃ আয়রন শিশুদের শরীরে ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করতে সাহায্য করে। শিশুর জন্মের সময় শরীরে যে পরিমাণ আয়রন থাকে তা ৬ মাস পর্যন্ত ইনফেশনের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে শরীরে আয়রনের অভাব দেখা দেয়া শুরু করে। তাই তখন শিশুদের পর্যাপ্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন – ডিম, কলা ইত্যাদি খাওয়ানো উচিত।

২। ভিটামিন এঃ ভিটামিন এ শিশুর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিবডি আমাদের শরীরকে জীবাণু এবং ইনফেকশন থেকে সুরক্ষিত রাখে। তাই শিশুকে ভিটামিন এ যুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়ানো খুব ই জরুরি। পাকা পেঁপে, গাজর, শাকসবজি ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে।

৩। ভিটামিন সিঃ ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেহের শ্বেত রক্ত কনিকা দেহের কোষগুলো কে সুরক্ষিত রাখে এবং ইনফেকশনের বিরুদ্ধেও লড়াই করে। আর তাই শ্বেত রক্ত কণিকার পরিপূর্ণ কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত ভিটামিন সি। কমলা, আমলকী, লেবু ইত্যাদি ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে।

৪। ভিটামিন বি৬: ভিটামিন বি৬ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অনেক জরুরি। এটি শরীরে অ্যান্টিবডি এবং লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে। রুটি, কলা, ডিম এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৬ থাকে। আপনি আপনার শিশুকে খাবারের সাথে এই খাবার গুলো দিতে পারেন।

৫। জিঙ্কঃ জিঙ্ক আমাদের শরীরে নতুন কোষ এবং এনজাইম তৈরি করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি জিঙ্ক হজমেও সাহায্য করে। মাংস, ডিম এবং সকল ধরনের দুগ্ধজাত পণ্যে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে।

 

এখন আমরা এমন কিছু খাবার নিয়ে কথা বলব যেগুলো আপনি ঘরে বসেই তৈরি করতে পারেন। পাশাপাশি এই খাবার গুলো আপনার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করবে।

১। আলমন্ডসঃ আলমন্ডসের অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। কিছু আলমন্ড নিন এবং তা সারারাত দুধে ভিজিয়ে রাখুন। পরে এই মিক্সার টি আপনার শিশুকে খাওয়ান। এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি তে সহায়ক হবে।

২। হারবাল পানীয়ঃ শিশু যখন ধীরে ধীরে বড় হয় তখন সে স্বভাবতই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চাইবে না। এক্ষেত্রে আপনার শিশুকে দিনে একবার গরম পানির সাথে তুলসি পাতা খাওয়ান। এছাড়া আপনি চাইলে জুসের সাথেও তুলসি মিক্স করে খাওয়াতে পারেন। তুলসি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি।

৩। গরম সুপঃ গরম সুপ শিশুদের ঠাণ্ডা এবং গলার জন্য বিশেষ কার্যকরী। আপনি চাইলে সুপের মধ্যে সবজি ও মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি তে সহায়ক।

৪। হলদি মিল্কঃ হলদি মিল্কে অনেক anti-inflammatory এবং anti-microbial properties আছে। দুধের সাথে হলুদের গুড়া মিশিয়ে প্রতি রাতে আপনার শিশু কে খাওয়ান।

 

এসব খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার যেগুলো শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় সেগুলোও খাওয়াতে পারেন। আশা করি শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কি কি করা উচিত সে ব্যাপারে ধারণা পেতে এই আর্টিকেল টি আপনাদের সাহায্য করবে।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, এই রেসিপি গুলো ৬ মাস বা ২ বছরের অধিক বয়সের শিশুদের খাওয়াবেন।