সন্তান জন্মের পর মায়েদের মানসিক অবস্থা

সন্তান জন্মের পর মেয়েদের অনেক বেশি শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। তবে শারীরিক পরিবর্তন সহজেই কাটিয়ে তুললেও মানসিক পরিবর্তন সারিয়ে তুলতে বেশ সময় লাগে। তখন মানসিক অবস্থাও ঠিক থাকে না। এইসময় সব কিছুর প্রতি কেমন যেন অনীহা কাজ করে। শারীরিক এবং মানসিকভাবে এক ধরনের অসুস্থতাবোধ করে সবসময়। কিন্তু কাউকে বলতে পারছে না এবং পরিবারের মানুষজন তার সমস্যা বুজছে না। এইরকম সমস্যা অনেক মায়েরই হয়ে থাকে সন্তান জন্মের পরপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গর্ভবতী মহিলা এবং নতুন মা একটি মানসিক ব্যাধি অনুভব করবেন, যার প্রধান হচ্ছে হতাশা। এই সংস্থার এক জরিপে জানা যায় ১০% নারী গর্ভাবস্থায় এবং ১৩% নারী সন্তানের জন্মের পর বিষণ্ণতায় ভোগেন। তাই আজকে আমরা জানবো প্রসবকালীন বিষন্নতা কি, এর লক্ষণ এবং কি করণীয়। 

প্রসবকালীন বিষন্নতা কি? 

সন্তান প্রসবের পর মা বিষন্নতায় আক্রান্ত হলে তাকে প্রসবোত্তর বিষন্নতা বলে। অর্থাৎ এটি বিষণ্নতার অভিজ্ঞতা যা গর্ভাবস্থায় শুরু হয় বা শিশুর জন্মের পরে হতে পারে। এটা এক ধরনের মানসিক সমস্যা যা সাধারণ বিষন্ন পর্যায়ে থাকে না এবং যে সমস্যার সমাধানের জন্য চিকিৎসা/ ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজন হয়।

প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের লক্ষণসমুহঃ

- সন্তান জন্মদানের পর হতাশা কাজ করে যা ২-৩ সপ্তাহ থাকে।

- কোন কারণ ছাড়া কান্নাকাটি করা। 

- সদ্যোজাত শিশুর যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে উদাসীনতা কাজ করে থাকে।

- অকারণ স্বামী স্ত্রী মধ্যে ঝগড়া হতে পারে। 

- খেতে না চাওয়া বা পরিমাণে বেশী খেতে চাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

- কম ঘুম যাওয়া বা ঘুমের পরিমান হঠাৎ বেড়ে যাওয়া।

- অকারণে দুশ্চিন্তা করা। 

প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের চিকিৎসা?

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে সাধারণত দুই ধরনের ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়ে থাকে, এক. অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট মেডিসিন, আর দুই. কাউন্সেলিং বা টক থেরাপি। অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট মেডিসিনের মধ্যে সিলেক্টিভ সেরেটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটরস হচ্ছে নিরাপদ এবং এটা প্রায়ই ব্রেস্টফীডিং মায়েদেরকে প্রেসক্রাইব করা হয়ে থাকে। কিন্তু অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। 


 

এইসময় পরিবারের সদস্যদের যা যা করা উচিত:

সদ্যোজাত শিশুসন্তানের লালনপালন করতে গিয়ে একজন মায়ের ওপর অনেক শারীরিক ও মানসিক চাপ পড়ে। এ সময় পরিবারের সদস্যদের অনেক বেশি সাপোর্ট দরকার হয়। এতে প্রসব-পরবর্তী মানসিক জটিলতা অনেকটা কমে যায়। যেমন; সন্তান পালনে নতুন মাকে সাহায্য করা। মায়ের শরীর ও মন কেমন আছে তা আন্তরিকভাবে খোঁজ খবর নেওয়া, বাসার কাজে কাজের ভার কমিয়ে দিয়ে নতুন মাকে কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, মায়ের ঠিকমতো খাবার খোঁজ নেয়া এবং ধর্যের সাথে পাশে থাকা।  

এইসময় পরিবারের সদস্যরা যা যা করা উচিত নয়:

এইসময় মায়েদের মানসিক অবস্থা খুব নমনীয় থাকে তাই সমালোচনা না করে তাদের পাশে থাকুন। এইসময় সারাক্ষণ শিশু পালনের ব্যাপারে মায়ের ভুল ধরবেন না এবং তা নিয়ে সমালোচনা করবেন না। অন্য মায়েদের কাজের সঙ্গে তুলনা করা বন্ধ করবেন, নতুন মা তাঁর মানসিক সমস্যার কথা জানালে সেটা গুরুত্ব না দিয়ে উড়িয়ে দেবেন না।

তাই নতুন মা হলে তাকে সবসময় সাহায্য সহযোগিতা করুন এবং তার প্রতিটি কাজে উৎসাহ দেন। কারণ এসব ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের পরামর্শ ও সাপোর্ট পেলে মা সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর বেশি সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ  নিবেন। সবশেষে, নিজেকে সম্মান এবং ভালবাসতে শিখুন তাহলে আপনার হতাশা আর আপনাকে গ্রাস করবে না।